ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খাল। বর্তমানে এই খালটি দখল করে চলছে দোকানঘর নির্মাণের কাজ। এছাড়াও সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখল করে একই কায়দায চলছে দোকান নির্মাণ। এসব কা-ের পরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগের নিরব ভূমিকায় প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। ইতোপূর্বে সড়ক বিভাগ এ জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে দুইবার নোটিশ দিলেও কার্যত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, ধলিয়া বাজার এলাকায় খালের জায়গা দখল করে প্রভাবশালী একটি মহল একের পর এক দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেছে। এর ফলে এলাকাটির স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন বর্ষায় এর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় এই এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতির ক্ষত এখনও শুকায়নি। এরই মধ্যে আবার খাল দখল নতুন করে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাল দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন ফেনী জেলা সমবায় অফিসের কর্মচারী মো. নজরুল ইসলাম সেলিম ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আবুল খায়ের লিংকন। নির্মাণ শ্রমিক জামাল উদ্দিন বলেন, লিংকন মামা দোকান নির্মাণ করছেন, যার দৈর্ঘ্য ২২ ফুট ও প্রস্থ ২৬ ফুট। তার পাশেই সেলিমের দোকান নির্মাণ হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, খাল দখলের কারণে হাজার হাজার কৃষকের জমির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। বর্ষার আগে খালটি দখলমুক্ত না করা হলে এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়বে এবং চরম দুর্ভোগে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। স্থানীয় আরও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাজারঘেঁষা খালের অংশ দখল করে স্থায়ীভাবে দোকান নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী দ্রুত খাল খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দা নুর করিম বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ধলিয়া বাজারে অবৈধ দোকানগুলো সেনাবাহিনী ভেঙে ফেলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফের দোকানঘর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সড়কের জায়গা ও খাল দখল করে দোকান নির্মাণ করছে। ধলিয়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালই এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ। অথচ প্রভাবশালীরা সেই খাল দখল করে স্থায়ীভাবে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে নজরুল ইসলাম সেলিমকে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা কান্তা জানান, এই বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে-জেনে জানাবেন
ধলিয়া বাজারের পাশে খাল দখল করে একের পর এক দোকানঘর নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিষয়টি জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, জেনে জানাবেন। তিনি জানান, দোকান নির্মাণ বিষয়ে সড়ক বিভাগের একটি চিঠি পেয়েছেন। উল্লেখ্য এই কর্মকর্তা এর আগে দীর্ঘদিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল দখলের কারণে গত বছর ভয়াবহ বন্যায় এলাকাবাসী ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি হলে একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। ওই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ও কৃষিকাজের একমাত্র মাধ্যম এই খালটি। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল ভরাট করে সেখানে স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করছেন। দখলের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বিকার রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।




জিডি ও নোটিশে সীমাবদ্ধ সড়ক বিভাগ
ফেনী-সোনাগাজী মুহুরী প্রকল্প সড়কের ধলিয়া ইউনিয়নের ধলিয়া বাজারে সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক উদ্যোগ সত্ত্বেও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। দুই দফা নোটিশ ও সাধারণ ডায়েরি করেও প্রভাবশালী দখলদারদের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে পারেনি সড়ক বিভাগ। সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সাত দিনের মধ্যে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনাসহ নোটিশ পাঠানো হলেও তা অগ্রাহ্য করে প্রভাবশালীরা দাপটের সঙ্গেই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সড়ক বিভাগের নোটিশ কার্যত উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। যদিও নোটিশে জানানো হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাপনা না সরালে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবু এই পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সড়ক বিভাগ।

ফেনী সড়ক উপ-বিভাগ-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আবদুল বাতেন সরকার জানান, কাজ বন্ধ রাখতে ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ছিদ্দিক সওদাগর বাড়ীর মো. নুরুল করিমের ছেলে নজরুল ইসলাম সেলিম, একই গ্রামের মো. ইসহাকের ছেলে মো. মাসুদ এবং মো. সিরাজ এর বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়া হয়। এতে কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও আবার নির্মাণ কাজ শুরু হলে দ্বিতীয়বার ২০২৫ সালের ১৪ মে নোটিশ প্রদান করা হয়। তবুও কাজ বন্ধ রাখেনি তারা। যেহেতু খালের মালিকানা পানি উন্নয়ন বোর্ড, তাই তাদেরকেও অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর, ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা মহাইমিনুল ইসলাম। এতে চার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ দখল ও নির্মাণের অভিযোগ তোলা হয়। তারা হলেন, ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ছিদ্দিক সওদাগর বাড়ীর নুরুল করিমের ছেলে মো. নজরুল ইসলাম সেলিম, একই গ্রামের মো. ইছহাকের ছেলে মো. মাসুদ, রিয়াদ হোসেন ও উত্তর গোবিন্দপুরের আজহারুল হকের ছেলে বেলায়েত হোসেন বাবু।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ধলিয়া বাজারে ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের পূর্ব পাশে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি দখল করে অবৈধভাবে ঘর ও কালভার্ট নির্মাণ করছেন তারা। সড়ক বিভাগের শাখা কর্মকর্তা মহাইমিনুল ইসলাম বলেন, একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে।