দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ফেনীর ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল আজহা কাটবে তার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে।
যখন অধিকাংশ মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন, তখন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমানের মতো অনেকে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকেন। ব্যাংকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকতে হয় তাদেরকে। ঈদের দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান দৈনিক ফেনীকে বলেন, পরিবারের সবাই যখন ঈদ আনন্দ করে, তখন আমার দায়িত্ব থাকে বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি কষ্টকর হলেও দায়িত্বের প্রতি অবিচল থাকতে হয়। ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। এ বেতনে তো কোরবান দেওয়া সম্ভব না।ঈদে সকলে বেতনের সাথে বোনাস পেলেও আমি সেটি পাইনা। অল্প টাকাতে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত।
শুক্রবার (৬ জুন) ফেনী শহরের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দৈনিক ফেনী।
ফেনীর মহিপালে একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তার কাজ করছেন একরামুল হক। পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের সুযোগ হয় না আমার। ইচ্ছে থাকলেও পেটের দায়ে বাড়ি যেতে পারি না। ঈদের দিনেও ডিউটি করতে হবে।
আমির হোসেন নামের ইসলামী ব্যাংক ট্রাংক রোড শাখার আরেকজন বলেন, আমাদের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই। ঈদের দিনেও আমাদের ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজে পাহারা দিতে হয়। আমি ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করার পর আরেকজন এসে পরবর্তী ৮ ঘণ্টার দায়িত্ব নেন। তিনি আরও বলেন, আমি এ পেশার সাথে ৪ বছর ধরে জড়িত। ঈদের দিনগুলোতে প্রথম প্রথম পরিবার ছাড়া ঈদ কাটাতে খারাপ লাগলেও এখন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।
মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম নামের যমুনা ব্যাংক ফেনী শহরের কলেজ রোড শাখার অপর একজন বলেন, আমি গত ৬ বছর ধরে এ পেশার সাথে যুক্ত আছি। প্রতিবছর আমাদের ঈদ বুথ পাহারা দেওয়ার মধ্য দিয়েই কাটে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হয় না, কিন্তু দায়িত্ব পালনের কাজটিতে আমি গর্ব অনুভব করি।
মোহাম্মদ নুর নবী নামের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নাজির রোড শাখার আরেকজন বলেন, গত ৮ বছর ধরে আমি এ পেশার সাথে যুক্ত আছি। প্রতিবছর ঈদ আমার এটিএম বুথের পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে কাটে। পরিবারের সকলকে খুশি রাখতে তাদের ছাড়াই ঈদ কাটাতে হয়৷ এ পেশায় আমি ৮ বছর। তবে, ভালোলাগে মানুষের আমানত রক্ষা করতে পেরে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রতিটি বুথে তিনজন নিরাপত্তারক্ষী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। আমি প্রথম ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করি, পরবর্তী ৮ ঘণ্টার জন্য আরেকজন দায়িত্ব নেন, এবং শেষ ৮ ঘণ্টার জন্য তৃতীয়জন দায়িত্ব পালন করেন। এভাবেই আমরা ২৪ ঘণ্টা বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।
আমাদের ঈদে ছুটি নেই। কারণ মানুষের আমানত রক্ষা করতে হয়। আমরা চলে গেলে মানুষের আমানত কে পাহারা দিবে!
ফেনী শহরের ৭০টিরও বেশি এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীদের সবার গল্প প্রায় একইরকম। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই আপন ঠিকানায় ছুটে গেলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে অংশ নিতে পারছেন না এসব নিরাপত্তাকর্মী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ব্যাংকের বুথে কাজ করলেও তাদের বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে অফিস নিয়োগ দিয়ে থাকে। আমাদের সঙ্গে তাদের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। সেজন্য ছুটির বিষয়ে আমরা কিছু করার সুযোগ নেই। মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করি। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।