ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সহকারীসহ পাঁচটি পদে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে জোরালোভাবে উঠেছে নানা প্রশ্ন। শুক্রবার (২০ জুন) ভোররাতে ফলাফল প্রকাশ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারী একাধিক চাকরিপ্রার্থী। তারা বলছেন, একদিকে ভোররাতে ফলাফল প্রকাশ অন্যদিকে ৭৫ নম্বর পেয়েও নাম আসেনি এমন অভিযোগ করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
ফলাফলের তালিকা প্রকাশের ধরণ, সময় এবং পদ্ধতি নিয়ে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, ওএমআর পদ্ধতিতে অটোমেটেড মেশিনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়েছে এখানে কারও হাত দেয়ার সুযোগ নেই। অন্যান্য পদের তুলনায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে পরীক্ষার্থীও বেশি ছিল যার কারণে ফলাফল প্রকাশে সময় লেগেছে।
এর আগে চাকরি প্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার সকালে ফেনী সদরসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় স্বাস্থ্য বিভাগের পাঁচটি পদের লিখিত পরীক্ষা। এসব পদ হচ্ছেÑস্বাস্থ্য সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং ড্রাইভার।
পরীক্ষা শেষে জানানো হয়, রাত ১০টার মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। তবে রাতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য সহকারী পফে ফল প্রকাশ না হওয়ায় অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান। অবশেষে রাত গভীর হলে ভোররাতে ফলাফল প্রকাশ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। কেউ কেউ ফল জানতেও পারেননি, কেউ দেখার সুযোগ পেয়েছেন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি তালিকার মাধ্যমে।
জানা গেছে, মোট ১১৫টি শূন্য পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১২ হাজার ৪৪৮ জন চাকরিপ্রার্থী। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন—স্বাস্থ্য সহকারী পদে ৩২০ জন, পরিসংখ্যানবিদ পদে ২৪ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ৩৩ জন, ল্যাবরেটরি এটেনডেন্ট পদে ৬ জন এবং ড্রাইভার পদে ৩২ জন।সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২০১৮, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনের আওতায় আবেদনকৃত প্রার্থীরা অংশ নেন।
ফলাফল প্রকাশের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক প্রার্থী বলছেন, আমার ৭৫টির বেশি সঠিক উত্তর ছিল, তবুও আমার নাম আসেনি। এমন অভিযোগ অসংখ্য প্রার্থীর। কেউ কেউ বলছেন, ইউনিয়নভিত্তিক বা ওয়ার্ডভিত্তিক নিয়োগ হলে অন্তত আমাদের নাম থাকার কথা ছিল, অথচ সেই পদ্ধতিরও কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি ফলাফলে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেনÑকেন পরীক্ষার ফলাফল ভোররাতে প্রকাশ করতে হলো? একজন প্রার্থী লিখেছেন, স্বাভাবিকভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল দিনের বেলায়, সকলের সামনে প্রকাশ হতো। কিন্তু হঠাৎ ভোররাতে ফল দিয়ে কর্তৃপক্ষ কী বোঝাতে চাইল?
তাদের দাবি, ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা থাকলে, নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা, কাটা পয়েন্ট, কোন কোন প্রশ্নে ভুল ছিল বা কোন মানদণ্ডে নির্বাচন করা হয়েছে এসব তথ্য স্পষ্টভাবে জানানো হতো। কিন্তু কিছুই জানানো হয়নি। বরং প্রক্রিয়াটি গোপন রেখে রাতের অন্ধকারে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
আব্দুল আহাদ নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন “একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম রাত ৪টায় প্রকাশ করে কীভাবে? গভীর রাতে কে এগুলো রেডি করসে? অফিস টাইমে রেজাল্ট না দিয়ে ভোর ৪টায় রেজাল্ট দিলো? রেজাল্ট কোন পদ্ধতিতে দেওয়া হয়েছে, উপজেলা, ইউনিয়ন নাকি মেধা? নাকি উপঢৌকন আর দলীয় সূত্রে?”
রিয়াদ মিয়াজী নামে আরেকজন লিখেন ৮০ এর মধ্যে কনফার্ম ৭০ এর বেশি পাইলাম। তাও নাম আসে নাই কেনো, আমার খাতা আমার সামনে কাটতে হবে।
শ্রাবণ দাস নামে আরেকজন লিখেছেন, “আমাদের সোনাগাজী উপজেলার ৫নং ইউনিয়নের অনেকে পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু কারো রেজাল্ট আসে নাই। এখানে এনারা বৈষম্য তৈরি করেছে।”
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, প্রথমত অনেক প্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছে তাদের রেজাল্ট প্রকাশ করা সময়ের ব্যাপার। অন্যান্য পদের তুলনায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে পরীক্ষার্থীও বেশি ছিল যার কারণে ফলাফল প্রকাশে সময় লেগেছে। যখন তৈরী হয়েছে তখন প্রকাশ করেছি লুকোচুরির কিছু নেই।
তিনি বলেন, ওএমআর পদ্ধতিতে অটোমেটেড মেশিনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়েছে এখানে কারও হাত দেয়ার সুযোগ নেই। লিখিত পরীক্ষায় নম্বর অনুযায়ী যারা সিরিয়ালি প্রথম ৩২০ জন সুযোগ পেয়েছে।
“লুকোচুরি কিছু নয়, ফলাফল মেশিনে মূল্যায়ন”
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে চাকরি প্রার্থীদের নানা অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে দৈনিক ফেনীর সাথে কথা বলেন ফেনী সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম। তিনি বলেন, পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং প্রযুক্তিনির্ভরভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, অনেক প্রার্থী ছিল, ফলাফল প্রকাশ করতে সময় লেগেছে। যখন রেজাল্ট রেডি হয়েছে তখনই প্রকাশ করেছি। লুকোচুরির কিছু নেই।
তিনি জানান, লিখিত পরীক্ষা ওএমআর পদ্ধতিতে অটোমেটেড মেশিনের মাধ্যমে মূল্যায়ণ করা হয়েছে। এখানে কারও হাত দেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যারা নম্বর অনুযায়ী প্রথম ৩২০ জনের মধ্যে রয়েছে, তারাই স্বাস্থ্য সহকারী পদে সুযোগ পেয়েছে। পরীক্ষা দিয়ে কেউ যদি বলে আমি ৮০ তে ৮০ পেয়েছি আমাদের তো কিছু করার থাকবে না। মেশিনে যে ফলাফল এসেছে সে অনুযায়ী মেধা তালিকা দেয়া হয়েছে। এখানে কোন কাট অফ মার্ক ছিল না।
ইউনিয়নভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষায় কে কোন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড থেকে এসেছে, সেটা বিবেচনায় আনা হয়নি। মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় এলাকাভিত্তিক বিষয়টি দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, কোন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কে পাশ করেছে সেটা বিবেচনায় আনা হয়নি। আমরা কারও পরিচিতির ভিত্তিতে নির্বাচন করিনি। বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা হয়েছে। আমরা শুধু সহযোগিতা করেছি।
পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়ে সিভিল সার্জনের ভাষ্য, আমি সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই, এই পরীক্ষায় কোনো রেফারেন্স বা সুপারিশের সুযোগ নেই। দীর্ঘ বছর পর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমরা চাই মেধাবীরা সুযোগ পাক।