আলোচিত কলেজ শিক্ষার্থী মিতা রানী নাথের মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও কাটেনি ধোঁয়াশা। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়ায় এখনো জানা যায়নি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন সেদিন মিতাকে হাসপাতালে নেওয়া কথিত বন্ধু অজয় সাহা। অন্যদিকে, এতোদিন পরেও অজয়কে গ্রেপ্তার করতে না পারায় এ মামলায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার।
নিহতের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,গত ১৭ মে বিকেলে ফেনী শহরের সহদেবপুর এলাকার বাসিন্দা তপন লাল নাথের মেয়ে ফুলগাজী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিতা রানী প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। পরবর্তীতে সেদিন রাত ৯টা ১২ মিনিটে অজয় সাহা নামের এক যুবক মিতার বড় বোন অপর্ণাকে মুঠোফোনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার আহত হওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার কথাও বলেন অজয়। সেদিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথিত বন্ধু অজয় নিজেকে মিতার স্বামী বলে পরিচয় দেন। অন্যদিকে একটি পিকআপ ভ্যানে মিতাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা সচল না থাকায় সংরক্ষণে নেই সেইসব দৃশ্য।পরবর্তীতে মিতার মৃত্যুর পরপরই হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন অজয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে কথা হয় নিহতের বোন অপর্ণা নাথ পূজার সঙ্গে। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। যেখানে এখনো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনই আসেনি, সেখানে পুলিশ আমাদের জানিয়েছেন এটি সড়ক দুর্ঘটনা। সেদিন কোথায় কি হয়েছিল বা আদোও সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল কিনা তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো মেলেনি। ওইদিন মিতাকে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পিকআপের নম্বর বের করা গেলেও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলতো। মিতাকে ট্রাংক রোড হয়ে হাসপাতালে নিয়েছিল বলে ছেলে জানিয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ট্রাংক রোড হয়ে কলেজ রোডের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলেও পুলিশ তা এখনো পারেনি।

মিতার কথিত বন্ধু অজয়কে এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অপর্ণা নাথ বলেন, অজয়কে পুলিশ এখনো আইনের আওতায় আনতে পারেনি। আমাদের ধারণা, ছেলেপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ঘটনার এতদিন পার হয়ে গেলেও এমন তৎপরতায় আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছি। দ্রুত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন চাই। প্রতিবেদন হাতে পেলে মামলাটি আমরা এগিয়ে নিব।

তিনি আরও বলেন, সেদিন অজয়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকা নিশাত ও তার স্ত্রীকে যদি আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে তাহলে তার (অজয়) খোঁজ মিলতে পারে। আমরা বোন হারালাম, আর তারা সবাই এখনো স্বাভাবিকভাবে দিনযাপন করছে। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ আমাদের ঘরে এসে কোনো মামলা না করতে বলেছিল। অনেকে অনেক কথা বলবে, তবুও আমরা যেন মামলা না করি এমন মন্তব্যও করেছিল। এতো বড় বড় অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারলেও পুলিশ এ ছেলের খোঁজই নাকি পায়না। পুলিশ চাইলেই যেকোনো সময় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সবমিলিয়ে আমরা এখন বিচার পাওয়া নিয়েই শঙ্কায় রয়েছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. সাকায়েত হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। সেজন্য মৃত্যুর প্রকৃত কারণও উদঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় করা মামলার আসামি অজয়কে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।