ফেনী জেলা শহরের কাঁচাবাজার ও মুদি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে অস্থিরতা প্রকট না হলেও কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে দামের চাপ রয়েছে। সবজির বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও রসুন, পেঁয়াজ ও কিছু আমদানি নির্ভর পণ্যের দামে এখনও ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না। এছাড়াও বর্ষার মৌসুম আসায় কিছু সবজিতে বাড়তি দাম দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, মাসের শেষভাগ হওয়ায় বাজারে ক্রেতার চাপ তুলনামূলক কম, যার প্রভাব পড়েছে বিক্রয়েও।

ফেনীর মহিপাল, বড় বাজার,হকার্স মার্কেট, মুক্তাবাজার ও ট্রাংক রোডের ভ্রাম্যমাণ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় তেমন পরিবর্তন হয়নি। করলা, বেগুন, পটল, টমেটো ইত্যাদির দামে কিছুটা পরিবর্তন হও শসা, পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়োর মতো সবজি তুলনামূলক সস্তায় মিলছে।

সরেজমিনে সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শসা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও পাতাকপি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। দাম তেমন বাড়তি নেই। গতকালকের তুলনায় আজকে দাম কিছুটা কম তবে, ক্রেতার সংখ্যা কম দেখছি।

স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা করে দাম কমেছে কিছু সবজিতে। তবে যেগুলোর সরবরাহ কম, বর্ষা যেহেতু শুরু হয়েছে কিছু সবজির দাম একটু বেশি।

ক্রেতাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, বাজারে গেলে এখন আর আগের মতো হঠাৎ দামবৃদ্ধির ধাক্কা খেতে হচ্ছে না। এক ক্রেতা আফরোজা বেগম বলেন, শুধু রসুন-আদা ছাড়া বাকি সব কিছুর দাম এখন মোটামুটি ঠিক আছে। মাসের শেষ, হাতে টাকা কম, তাই হিসেব করে কিনতে হচ্ছে।

লিজা আক্তার নামের একজন ক্রেতা বলেন, আজকে কিছু কিছু সবজির দাম বেশি। টমেটো আগে অনেক কম দামে ছিল। এখন দাম বেড়েছে। আগে টমেটো নিয়েছি ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে, আজকে টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া অধিকাংশ দোকানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে, যদিও কিছু দোকানে এখনও ১৫০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১১.৫-১২ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে কিছুটা বেশি দামে আনতে হচ্ছে বলে এই সামান্য পার্থক্য তৈরি হয়।

তবে বাজারে চালের দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী। ৮০ টাকা দরে চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে, আর রসুনের দাম উঠেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। অন্যদিকে আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি নির্ভর হওয়াতে এই পণ্যেগুলো দামে স্বাভাবিকভাবেই চাপ থাকে। এছাড়া মসুরডাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা, আটা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চিনি ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মাসের শেষ সপ্তাহে সবসময়ই ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কমে যায়। বিশেষ করে বেতনের আগে সাধারণ খরচে ভাটা পড়ে। বড় বাজারের মুদি দোকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে বিক্রি কিছুটা কমেছে। মাসের শেষ হওয়াতে লোকে এখন শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসটাই নিচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। টাস্ক ফোর্স প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছে। গতকিছুদিন আগে একটি চালের আড়তে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কেউ পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি ব্যবসায়ীদেরও সৎভাবে পণ্য বিক্রির অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, অন্যান্য পণ্য স্বাভাবিকপর্যায়ে থাকলেও চালের বাজারে কিছুটা অস্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি সবজির দাম ও ওঠানামা করছে। এ বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে।