১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্ররাজনীতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকা জয়নাল হাজারী কলেজে দীর্ঘ বছর পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকা-। গতকাল সোমবার (১১ আগস্ট) প্রার্থীতা ফরম বিতরণের মধ্য দিয়ে কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জেলার রাজনীতি মুক্ত ও নিয়মশৃঙ্খলার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত এ শিক্ষাঙ্গনে এমন কা-ের জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতাকে দুষছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
নূর হোসেন নামে কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো দল যে কাজ করেননি, আজ একটি সংগঠনের নেতারা তা করে দেখালেন। বিষয়টি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রিয় আঙিনায় এমন কা- দেখে দূর থেকে খুবই আফসোস হচ্ছে। আশাকরি সকলে এবিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।
ওসমান বিন নবী নামে আরেকজন বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অভিভাবকদের টাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান হয়, সেখানে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত। আজকের এমন কর্মকা-ের জন্য কলেজ প্রশাসনের নিরবতা ও মেরুদ-হীনতাই দায়ী। কারণ অতীতে এ কলেজ কমিটিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা থাকলেও শুধুমাত্র কলেজ প্রশাসনের কঠোরতার জন্য কোনো ধরনের কমিটি দিতে পারেনি। এখনই সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ দৈনিক ফেনীকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে এসেছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এ কলেজ রাজনীতি মুক্ত ছিল। এসব বিষয় কলেজের অধ্যক্ষ দেখভাল করবেন। আমরা উনার নিয়ন্ত্রণেই কাজ করি। এটির জবাবও উনি দেবেন। শিক্ষকদের ভালো-মন্দের বিষয়গুলো তুলে ধরাই শিক্ষক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, রোববার (১০ আগস্ট) ছাত্রদলের একজন ছেলে আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করার কথা জানিয়েছিল। আবার সোমবারও কলেজে এসে আমাকে কল দিলে তাদের কর্মসূচি শেষ করে ফেলতে বলি। তখন পরিবারসহ আমি ফেনী ক্যাডেট কলেজে অবস্থান করছিলাম। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা-ের বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না।
কলেজ প্রশাসনের নিরবতার অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়গুলো কলেজ গভর্নিং বডিকে অবগত করা হবে। কারণ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সকলে চান কলেজটি রাজনীতি মুক্ত থাকুক। মূলত এমন কিছুর বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আশাকরি আমরা কলেজটি রাজনীতি মুক্ত রাখতে পারব।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম মিলন বলেন, যারা রাজনীতি করতে ইচ্ছুক, আমরা তাদেরই সদ্য ফরম দিয়েছি। ২৪ এ ছাত্রদের আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য আন্দোলন-সংগ্রামেও এই দেশের ছাত্রদের অসামান্য অবদান রয়েছে। সেই হিসেবে জয়নাল হাজারী কলেজ কেন এর বাইরে থাকবে?
এ ব্যাপারে জয়নাল হাজারী কলেজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক দৈনিক ফেনীকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে জেলার মধ্যে কলেজটি রাজনীতি মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো ছিল। কোনো ধরনের হানাহানি বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই কলেজ ও লেখাপড়ামুখী ছিল। যেহেতু কলেজটি রাজনীতিমুক্ত ছিল, সেজন্য আমি এ বিষয়ে ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছি।
কলেজে রাজনৈতিক কর্মকা-ের বিষয়ে নিজের অবস্থান প্রসঙ্গে অধ্যাপক এমএ খালেক বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন এটি আমার ইচ্ছেতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের নেতাদের যেকোনো প্রোগ্রাম কলেজের বাইরে করতে বলেছিলাম। কলেজটি যেহেতু আগে থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সেজন্য এখানে কোন কমিটি না করাই ভালো হবে বলেও বলেছি। কারণ রাজনীতিতে ঢুকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হবে, রাজনীতিমুখী হয়ে পড়বে। সর্বশেষ ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। সবমিলিয়ে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ গভর্নিং বডির পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঙ্গে বসে কথা বলব।