জেলায় সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফেনী সদরে সাক্ষরতার হার ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ সোনাগাজীতে ৭৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। জনশুমারি ও গৃহ গণনা ২০২২ সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। গতবছর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য প্রকাশ করেছে।
একই সূত্রে দেখা গেছে, ফেনীতে একই বয়সী জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক ৭৯ শতাংশ যা জাতীয় পর্যায়ে ৭৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। সাক্ষরতার দিক থেকে উল্লিখিত বয়সে ফেনীতে পুরুষের সাক্ষরতার হার নারীর চেয়ে বেশি। জনশুমারি অনুযায়ী পুরুষের সাক্ষরতার হার ৮২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং নারীর সাক্ষরতার হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
অন্যন্য উপজেলার ক্ষেত্রে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়স বিবেচনায় ছাগলনাইয়ায় সাক্ষরতার হার ৮১ দশমিক ৬৮ শতাংশ, দাগনভূঞায় ৮০ দশমিক ১০ শতাংশ, ফুলগাজী ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং পরশুরামে ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
জাতীয় পর্যায়ের তুলনায় ফেনীর এগিয়ে থাকা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখা সমীচীন মনে করছেন না একাধিক শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন। তারা বলছেন, প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নিরক্ষরÑএটি আলোচ্য হওয়া উচিত। কারণ, ফেনীর মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে, অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। মৌলিক সুবিধা থাকার পরও শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা অগ্রহণযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে ফেনী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও ফেনী ইউনিভার্সিটির সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর তায়বুল হক বলেন, শিক্ষায় এগিয়ে যেতে কেবল আর্থিক স্বচ্ছলতা একমাত্র শর্ত নয়। ফেনী জেলা আর্থিক সক্ষমতায় এগিয়ে থাকা মানে এমন নয়, সকলে স্বচ্ছল। এমন অনেক পরিবার রয়েছেন যারা অতি দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছেন। তাদের কাছে সন্তানকে পাঠশালায় পাঠানোর পরিবর্তে রোজগারে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি হয়ে থাকে।
সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, সোনাগাজীতে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভালো চাকরি বা আয়ের নিশ্চয়তা না থাকার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তানদের পড়াশোনায় উদাসীন। উপজেলার পথে-প্রান্তরে কিশোররা সিএনজি ও অটো রিকশা চালানো, রাজমিস্ত্রীর কাজ বা অন্য কোনো মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। কেউবা অল্প বয়সে বিদেশ যাচ্ছে, অন্যদিকে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিচ্ছে পরিবার । দারিদ্র্য বা প্রবাসী পরিবার উভয়ের সন্তানরাই পড়াশোনায় মনোযোগ কম দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাব, মাদক ও কিশোর অপরাধ শিক্ষার্থীদের পথভ্রষ্ট করছে, সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ঘাটতি শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা আশা করি, সমন্বিত উদ্যোগে এই সমস্যা মোকাবেলা সম্ভব হবে।
জনশুমারির তথ্যে আরও দেখা গেছে, ৫ হতে ২৯ বছর বয়সের মধ্যে জেলায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৯০ জন এবং নারী ২ লাখ ২২ হাজার ৯৫৪ জন। এরমধ্যে ১০ হতে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার্থীর হার ৯০ দশমিক ৮৬ অথবা এক লাখ ৬১ হাজার ৮০১ জন। এক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে। এ বয়সীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর হার ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৮৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
জনশুমারির তথ্যমতে জেলায় ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী পুরুষের মধ্যে ৮০ হাজার ৮৬ জন অথবা ১৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়নি। একই বয়সী নারীদের মধ্যে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৭৮ জন অথবা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়নি।
অন্যদিকে, স্নাতক ও তদূর্ধ্ব ডিগ্রি অর্জন করেছেন ৬৯ হাজার ৩০৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪৬ হাজার ৭০২ জন এবং নারী ২২ হাজার ৬০১ জন।