ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলা ও মারধরের অভিযোগে আরও একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার ১৩ মাস পর গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন এনায়েত উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি। এতে দৈনিক দেশ রূপান্তর ও ইউএনবির ফেনী জেলা প্রতিনিধি ও জুলাই আন্দোলন চলাকালে আহত শফি উল্লাহ রিপন ও দৈনিক ফেনীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন ডন চৌধুরী ও দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক সাহেদ সাব্বিরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজিসহ ১০৬ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৫০-১০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আদালতে আবেদন করা হয়। মামলার বাদী এনায়েত উল্যাহ সোনাগাজী উপজেলার পূর্ব সুজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

মামলায় সাংবাদিকদের আসামি করা প্রসঙ্গে উক্ত তিন সাংবাদিক বলেন, সোনাগাজীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় আমরা আসামি। অপরাধ সংবাদ বন্ধে আমাদের নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে আসাসিদের নির্দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নির্বিচারে গুলি চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বাদীসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। এসময় ৯ জন নিহত ও দুই শতাধিক ছাত্রজনতা আহত হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিতেও বাধা দেওয়া হয়। পেশায় শ্রমিক হওয়ায়, দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়া ও পরিবারের খরচ বহনসহ নানা কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।

অন্যদিকে মহিপালে গণহত্যা ও বহু গুলিবিদ্ধের মতো বর্বরোচিত ঘটনায় সাংবাদিকদের জড়ানোর অপচেষ্টায় এদিন রাতে ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জরুরি সভায় মিলিত হয় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। মামলার নামে সাংবাদিকের কণ্ঠরোধে ভয়াল ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। সভায় সাংবাদিক হয়রানির প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণার কথা বলেছেন তারা।

মামলায় আসামি হওয়া দৈনিক দেশ রূপান্তরের ফেনী জেলা প্রতিনিধি শফি উল্লাহ রিপন বলেন, সম্প্রতি সোনাগাজী থানার সালিশ বাণিজ্য, চুরি-ডাকাতি নিয়ে পেশাগত কাজে একাধিক সংবাদ করেছি। এতে একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে এ মামলায় যুক্ত করেছে। এছাড়া আমি জুলাই আন্দোলনেও একজন আহত সাংবাদিক।
মামলার আরেক আসামি দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক সাহেদ সাব্বির বলেন, সম্প্রতি সোনাগাজীতে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের নামে এ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। তবুও আমরা ন্যায় ও সত্যের পথে অটল থাকব।
দৈনিক ফেনীর বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ডন চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রের দায়িত্ব হল সত্য ও ন্যায় তুলে ধরা। সম্প্রতি অনিয়ম ও অন্যায়ের খবর প্রকাশের পর আমাকেসহ সহকর্মীদের মামলার আসামি করা হয়েছে। সংবাদপত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আমার নাম জড়ানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক ও হয়রানিমূলক। সত্য প্রকাশে ভীত না হয়ে আমরা দায়িত্ব পালন করে যাব।
দীর্ঘ সময় পর মামলা করার কারণ প্রসঙ্গে জানতে কথা হয় বাদী এনায়েত উল্যাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা করতে সময় লেগেছে। আসামিদের সকলকেই আমার চেনা।
এ হামলার সঙ্গে সাংবাদিকদের জড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে হামলার ঘটনার পোস্ট রয়েছে। একপর্যায়ে মুঠোফোনে এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না বলে কল কেটে দেন এ মামলার বাদী।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম বলেন, ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পর এসে এমন মামলার ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত গণঅভ্যুত্থানে হওয়া প্রকৃত মামলাগুলোকে দুর্বল ও জুলাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্যই অনেকে এখন এসব মামলা করছে। এককথায় এখানে বিচারের নামে অবিচার শুরু হয়েছে। আমরা এসবের নিন্দা জানাই।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সোনাগাজীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক দেশ রূপান্তর ও দৈনিক ফেনীতে। এতে উল্লিখিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি মহল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এর জের তাদের ইতোপূর্বে তাদের মামলায় ফাঁসানোরও হুমকি দেওয়া হয়।