ফেনীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন টাস্কফোর্স অভিযানে ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বছরব্যাপী জরিমানার পরিমাণ বাড়লেও ভেজালের প্রভাব কমেনি, অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে ভোক্তার অধিকার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা ও উপজেলাজুড়ে ভোক্তা অধিকার আইনে ৪২৬টি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময়ে ৮৬৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর ৮৯টি অভিযান চালিয়ে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করে।
একই সময়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, কৃষি বিপণন আইনসহ বিভিন্ন আইনে ৩৩৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৭০২টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ জমা পড়ে ১৯২টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮৯টি, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মাত্র ৩টি অভিযোগ। অভিযোগ নিষ্পত্তির হার ৯৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক ব্যবসায়ী আইন মেনে চলে না। জরিমানার পরেও তারা সচেতন হয় না। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করেন। এতে সৎ ব্যবসায়ীদেরও বদনাম হয়।
শহর ব্যবসায়ী সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আইন দিয়েই এটি বন্ধ করতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীদের সচেতন করার উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। দেশে খাদ্যপণ্যে প্রতারণা সবচেয়ে বেশি। দুর্গাপূজার পর ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করব। নাজমুল হক সজীব নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে গেলে শুনি অভিযান হয়, কিন্তু কারও মধ্যে সচেতনতা দেখি না। সচেতনতা বাড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসায়ীরা শুধু মুনাফার চিন্তা করেন। আর আমরা ভোক্তারাও প্রতিবাদ করি না। এজন্য আইন বাস্তবায়ন হয় না। মশিউর রহমান নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ভোক্তা অধিকার আইন বেশি প্রয়োগের প্রয়োজন খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে। স্কুলের ক্যান্টিনগুলোতে শিক্ষার্থীরা যে খাবার খায় সেটিও কতটুকু নিরাপদ তা আমরা জানিনা। ব্যবসায়ীদের এসব বিষয়ে সচেতনতা জরুরি, কারণ অভিযান হলেও প্রতিকার হচ্ছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী কেউই সচেতন না। উন্নয়নশীল দেশে ভোক্তার আইন প্রচলিত নয়। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়াতে এ আইনটি সামনে এসেছে। কিন্তু অনেক ভোক্তা জানেন না কোথায় অভিযোগ করলে প্রতিকার পাবেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা আছে। সুযোগ পেলেই তারা ভোক্তাকে ঠকায়। খাদ্যপণ্য, ওষুধ, সেবাসহ নানা ক্ষেত্রে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন, কিন্তু প্রতিকারের জায়গা সীমিত। জনবল সংকটও বড় সমস্যা। বর্তমানে জেলায় মাত্র দুইজন কর্মকর্তা দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এর মধ্যে আমাকে নোয়াখালীরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। উপজেলা পর্যায়ে জনবল থাকলে সচেতনতা বাড়ত, আইনের প্রয়োগও তখন আরও ভালো হতো। এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসন সব কাজ করে সমাধান করতে পারবে তা হতে পারেনা। একটি সমাজকে ঠিক করতে সমাজের মানুষকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসন সরকারি আইন প্রয়োগ করে, তবে এর পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। সবাই যখন কাজ করবে তখনি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, এখানে জনবল সংকট আছে, কাজে এটির প্রভাব পড়ে। আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করব যেন জনবল বাড়ানো যায়।
