ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফিশপ্লেট খুলে লাল কাপড় বেঁধে রাখে দুর্বৃত্তরা। তবে সময়মতো বিষয়টি টের পেয়ে রেলকর্মীরা লাইন মেরামত করায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) ভোরে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে দক্ষিণ সহদেবপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মালবাহী এ ট্রেনটির বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাটি ফেনী অংশে আসার আগেই ঘটে। ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী ছিল—অর্থাৎ, এটি সীতাকুণ্ড অতিক্রম করে ফেনী হয়ে ঢাকার পথে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সীতাকুণ্ডের শেখপাড়া এলাকায় রাত ৪টার দিকে লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে ট্রেনটির মূল অংশ ফেনী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ফেনী রেলস্টেশন থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মিটার দূরে দক্ষিণ সহদেবপুর রেলওয়ে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় রাতের আঁধারে রেলপথের যন্ত্রাংশ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। তারা রেলপথের আপলাইনে ৮৯ দশমিক শূন্য ১ অংশে একটি রেলবিটের ফিশপ্লেট, ছয়টি নাট, ২০টি কার্ড স্লিপার ও ৪০টি ইআরসি খুলে ফেলে। পরে রেলবিটটি এক ফুট দূরে পাশের সিগন্যাল বাতির খুঁটির সঙ্গে লাল কাপড়ে বেঁধে রাখা হয়। খুলে ফেলা রেলবিট থেকে চট্টগ্রামমুখী লাইনের ১০০ গজ অদূরে রেললাইনের ওপর লাল কাপড় টানিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গেটম্যান আমিনুল ইসলাম সকালে দায়িত্ব পালনে গিয়ে রেললাইনের ওপর লাল কাপড় ও খুলে ফেলা রেলবিট দেখতে পান। পরে সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান তিনি। খবর পেয়ে কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় লাইন সাময়িকভাবে ঠিক করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, এটি পরিকল্পিত নাশকতার অংশ। কারণ দুর্বৃত্তরা শুধু ফিশপ্লেটই খুলে নেয়নি, সঙ্গে রেঞ্জ ও ছেনিজাতীয় হাতিয়ার ঘটনাস্থলে ফেলে গেছে। কাছাকাছি সিগন্যাল খুঁটিতে লাল কাপড় বেঁধে রাখার মাধ্যমে ট্রেন চলাচলে বাধা তৈরির চেষ্টা ছিল। তবে এটি নাশকতা নাকি চুরির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে।

ফেনী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. হারুন জানান, শিডিউল অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেনী স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল, তবে সীতাকুণ্ডে একটি মালবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় সেটি আসে সাড়ে ৯টায়। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং দল সকাল ৭টার মধ্যেই বিষয়টি জানতে পারে, ফলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফিশপ্লেট খুলে ফেলার খবর না পেলে মালবাহী হোক বা যাত্রীবাহী ট্রেন—সেক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। এতে জানমালের ক্ষতি ছাড়াও ট্রেন চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটত।
ফেনী রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগের মেট (২৩ এ) ফারুক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাইনটি মেরামত করা হয়। সকাল ৮টার পর আপলাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে ফেনী রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সারোয়ার আলম বলেন, যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে রাতে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা আড্ডা দেন। এটি নাশকতা নাকি চুরি, বিষয়টি অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে। প্রকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে জিআরপি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ফেনী রেলস্টেশন জিআরপি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তরুণ কান্তি চাকমা বলেন, রেলওয়ে পুলিশ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে লাকসাম জিআরপি থানায় প্রাথমিকভাবে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।