ফেনী জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন উপলক্ষ্যে আজীবন সদস্যদের ডাকযোগে পাঠানো বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আমন্ত্রণপত্র ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে দেখা দিয়েছে ‘ভৌতিক কাণ্ড’। ঠিকানা সঠিক থাকা সত্ত্বেও অনেক আজীবন সদস্য ডাকবিভাগ থেকে চিঠি পাচ্ছেন না। এমন কাণ্ডে ভোটার ও প্রার্থীদের মনে নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ফেনী ইউনিটের মোট ১ হাজার ৬৯৭ জন আজীবন সদস্যকে ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন মৃত। অভিযোগকারীদের দাবি, ডাক বিভাগ বহু চিঠি ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে সরাসরি ইউনিট অফিস থেকে ভোটার আইডি সংগ্রহ করছেন, অনেকে আবার এখনো নির্বাচনের কথাও জানেন না।

এদিকে চিঠি না পাওয়াতে নির্বাচনে ভোটার কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ ভোটার কার্ড ব্যতীত এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। যার পেছনে একটি মহলের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক প্রার্থী। তাদের দাবি একটি পক্ষ কৌশলে নির্দিষ্ট কিছু ভোটারকে ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে চায়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অশোক বিক্রম চাকমা এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেকে ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, আবার অনেকে আগের ঠিকানায় থাকেন না। এজন্য কিছু চিঠি ফেরত এসেছে। যারা চিঠি পাননি তারা ইউনিটে এসে চিঠি নিতে পারছে। বিকল্প সুযোগ ১৯ তারিখ পর্যন্ত, প্রয়োজনে ২০ তারিখ সকাল পর্যন্ত থাকবে। উৎসবমুখর পরিবেশে সকলকে উপস্থিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ জন ভোটার ডাক বিভাগের চিঠি না পেয়ে নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করেছে, যা মোট ভোটারের ৫ ভাগের ১ ভাগও নয়। রেজিস্টার্ড সরকারি ডাকযোগেই চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি গায়েব হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে রিসিভ কপি আছে। যারা চিঠি পাচ্ছেন না তারা আসছেন, বিকল্প থাকাতে কারও ভোটাধিকার ব্যাহত হবে না।

নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, ভোটের দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ সব ব্যবস্থাই থাকবে। ভোটার কার্ড ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

এদিকে নির্বাচনে এজেন্ট সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে ছয়টি বুথে ৩২ জন প্রার্থীর প্রত্যেকের ৬ জন করে মোট ১৯২ জন এজেন্ট থাকতে পারবে। এতোজন এজেন্ট থাকাতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে বলেও এ নিয়ে একটি মহল শঙ্কা প্রকাশ করছে। তবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটি প্রার্থীদের অধিকার। এতে ভোটে প্রভাব পড়বে না। সকলে ৬ জন করে এজেন্ট দেবেন এমনও নয়।

ফুলগাজীর আজীবন সদস্য রবিউল আজিম চৌধুরী রাহাত। নির্বাচনে তিনি সদস্য প্রার্থী। তিনি বলেন, পোস্ট অফিস বলছে আমার নামে কোনও চিঠি আসেনি। অন্য কেউ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলল, সেটিও না। ঠিকানা ঠিক ছিল, তবে আমি চিঠি পাইনি। পরে ইউনিট অফিসে আবেদন করে কার্ড নিয়েছি। আমার পরিচিত আরও ১০-১২ জন একই সমস্যায় পড়েছেন। এতে ভোটাররা হয়রানির শিকার হচ্ছে।

অভিযোগ করে আজিম চৌধুরী রাহাত বলেন, ডাকবিভাগ চিঠি দিতে না গিয়ে কয়েকজনের চিঠি একসঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন। এতে ভোটারদের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। অনেকে জানেনই না চিঠি এসেছে।
ফুলগাজীর এক ডাক বিভাগের কর্মকর্তার কথায়ও মিলেছে এমন ইঙ্গিত। গোপনে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন আজীবন সদস্যের চিঠি দপ্তরেই নেই বলে জানাচ্ছেন পোস্ট অফিসের এক কর্মকর্তা। অথচ সংশ্লিষ্ট সদস্য দাবি করছেন তার ঠিকানা পুরোপুরি সঠিক।

ফেনী প্রধান ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার মো. কামাল হোসেন বলেন, যেসব চিঠি দেওয়া হয়েছিল সব বিলি করা হয়েছে। অনেকের ঠিকানা অসম্পূর্ণ ছিল, অনেকে মারা গেছেন। এসব চিঠি ফেরত এসেছে, যা রেড ক্রিসেন্ট অফিসে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিঠি আসলে না দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এরপরও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোটার ‘টার্গেট’ করে চিঠি গায়েব-দাবি প্রার্থীদের

বার ফেনী জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সেক্রেটারি পদপ্রার্থী আ.ন.ম আব্দুর রহিম বলেন, আজীবন সদস্যদের চিঠি না পাওয়ার অভিযোগ সত্য। আমি নিজেই একজনের হাতে অনেক সদস্যের চিঠি দেখেছি। পোস্ট অফিস থেকে কিছু প্রার্থী চিঠি সংগ্রহ করে নিজের আয়ত্তে রাখছে। এই বিষয়ে কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা বলেছি ভোটার কার্ড না পেলেও যেন ভোটার আইডির ছবি-ঠিকানা দেখিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

আরেক সেক্রেটারি পদপ্রার্থী রশিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ছাগলনাইয়ার ভোটার ওহিদ উল্ল্যাহর চিঠি আমার প্রতিপক্ষের একজন কট্টর সমর্থক গ্রহণ করেছে, কিন্তু ভোটারের কাছে চিঠি পৌঁছায়নি। এমন অভিযোগ আরও পেয়েছি। বিশেষ করে পুরানো ভোটারদের টার্গেট করা হচ্ছে। যারা আমাদের পক্ষে ভোট দেবেন বলে চক্রটি ধারণা করছে, সেই ভোটারদের টার্গেট করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে না। ঠিকানা সঠিক থাকা সত্ত্বেও আমি নিজেই চিঠি পাইনি।

তিনি বলেন, এখানে রেড ক্রিসেন্ট অফিসের দোষ নেই, তারা পোস্ট অফিসে দিয়েছে। পোস্ট অফিসের লোকদের কাছ থেকে চিঠিগুলো নিয়ে সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে না। নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ একজন প্রার্থী এসব কাণ্ডে জড়িত।
এ প্রসঙ্গে অন্য সেক্রেটারি প্রার্থী সালাউদ্দিন মামুন বলেন, চিঠি না পাওয়ার অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ অনুযায়ী অনেকজনকে কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমার সমর্থিত অন্তত ৫০ জন চিঠি পাননি। একটি চক্র ভোটার কমাতে কাজ করছে। তারা জালভোট দিতে পায়তারা করছে। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি কোনো সদস্য যদি ভোটার কার্ড না পান সেক্ষেত্রে উপস্থিত ভোটার আইডি কার্ড দেখে তাদের চিহ্নিত করে যেন ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।