মুক্তিযুদ্ধের সময় (১৯৭১) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ফেনীর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই সময়কালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার বিবরণ খুঁজে পায় দৈনিক ফেনী। ইতিহাসের সেই অজানা দিক উন্মোচনে আজ ৬ ডিসেম্বর ‘ফেনী মুক্ত দিবসে’ পড়ুন দৈনিক ফেনীর বিশেষ প্রতিবেদন ⇒


মুক্তিযুদ্ধকালীন ফেনীতে প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছাড়েন। তাঁরা ভারতে গিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ প্রকাশিত সংবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সংবাদটিতে বলা হয়, ‘‘সীমান্তের অপর পার হতে শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন শুরু হয়েছে। বিলোনিয়ার পথে বাস্তুত্যাগীরা ফেনী আগমন করে ট্রেনে ও বাসে নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাচ্ছে। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বিশেষ ট্রেনে বহু বাস্তুত্যাগী লাকসাম জংশনে পৌঁছে।

এই সমস্ত শরণার্থী লাকশাম হতে নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ফেনীর দিকে ট্রেনে দলে দলে প্রত্যাবর্তন করে। ফেনী মহকুমার শরণার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৪২ হাজার। সম্প্রতি ফেনী ও সমবায় ব্যাঙ্ক ভবনে প্রতিনিধি-স্থানীয় ব্যক্তিদের এক সভায় ফেনী মহকুমা সাহায্য পুনর্বাসন কমিটি গঠিত হয়েছে। স্থানীয় জননায়ক জনাব খাজা আহমদ এম, এন, এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় মহকুমা প্রশাসক জনাব শহীদ আখন্দও উপস্থিত ছিলেন। সভায় গঠিত ফেনী মহকুমা সাহায্য ও পুনর্বাসন কমিটিতে ১৪ জন সরকারী ব্যক্তি ও ২৭ জন বেসরকারী ব্যক্তি রয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মকবুল হোসাইন এই কমিটির সম্পাদকের কার্য্যভার গ্রহণ করেছেন।’’

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একই পত্রিকায় ‘ফেনীতে দেড় লক্ষাধিক শরণার্থীর প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে প্রকাশিত অপর একটি খবরে উল্লেখ করা হয়েছে - ‘‘পাকিস্তান বর্বরবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণভয়ে ভীত হয়ে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীদের মধ্যে দেড় লক্ষাধিক নরনারী ইতোমধ্যেই এই মহকুমায় ফিরে এসেছে বলে এখানে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। প্রত্যাগত শরণার্থীদের জন্য এই মহকুমায় চারটি অস্থায়ী অবস্থান শিবির খোলা হয়েছে। শিবির চারটি হচ্ছে ফেনী, ছাগলনাইয়া, মতিগঞ্জ ও পরশুরাম। এই শিবিরগুলো থেকে তাদের স্ব স্ব গ্রামে পৌঁছানোর জন্য কর্তৃপক্ষ যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে এবং রেডক্রসের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রাথমিক সাহায্যদ্রব্যও সরবরাহ করা হচ্ছে।”