ফেনীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে গত ৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন তারা। দাবি আদায়ে ওইদিন ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন সহকারি শিক্ষকরা। ওইদিনের পরীক্ষাগুলো ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ফেনীতে যেসব বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি এবং উক্ত পরীক্ষাগুলো সঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। এরমধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে শীতকালীন ছুটি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক বিজ্ঞান দুপুর দেড়টা থেকে ৪টার মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। সহকারী শিক্ষকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে অনেক বিদ্যালয়ে ওইদিন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পরীক্ষা গ্রহণে নতুন নির্দেশনা পাওয়ায় তারা আশ্বস্ত হয়েছিলেন।

জানা গেছে, সহকারি শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ওইদিন ফেনী সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা আমিন ও ফেনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজি উল্লা স্থানীয় অনলাইনে বক্তব্য দেন। এ কারণে পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় বেড়ে যায়। ওইদিন বালিগাঁও ইউনিয়নের বালিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মরুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মধ্যম হকদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮টি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে অভিভাবকদের।

বালিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরীফ নিজের ফেইসবুক আইডিতে সহকারি শিক্ষকদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে লাইভ করেন। উত্তর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন সুমন পরীক্ষা বর্জন করে সহকারি শিক্ষকদের বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে।

৪ ডিসেম্বর পরীক্ষা বর্জন করে উপজেলায় বিক্ষোভ অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. শাহজাহান, সদর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর চাড়িপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, পশ্চিম সিলোনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কিশোর চক্রবর্ত্তী, ফেনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নমিতা পাল, রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম, আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আইয়ুব খান ও উত্তর কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জাকির হোসেনসহ উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা। ফেনীর ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৪৫ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন।

রাবেয়া সুলতানা নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন ৪ তারিখের স্থগিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কখন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না।

ফেনী সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা আমিন জানান, সহকারি শিক্ষকদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মৌখিক পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে হয়নি। পরে অন্য পরীক্ষার সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে কোন তারিখে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি আরও জানান, ৪ ডিসেম্বর বিকালে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান পরীক্ষা যথাসময়ে নেওয়া হয়েছে। সেসময় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ফেনী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজি উল্লাহ বলেন, সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে পরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

ফেনী পাইলট আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারাহ দিবা খানম বলেন, জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫ জন শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেকোনোভাবে বার্ষিক পরীক্ষা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের সহায়তায় সকল পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, সদর উপজেলার উত্তর গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চাপ প্রয়োগ করে পরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হত। আমার জানা মতে সদর উপজেলায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ১১-১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থগিত পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ফেনী মডেল ও সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ যেসব বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রমে অংশ নেয়নি, পরে ওই পরীক্ষাগুলো গ্রহণ করা হয়েছে বলে শিক্ষকরা তাকে আশ্বস্ত করেছেন।