দেশে এই প্রথমবার বাংলাদেশ স্কাউটস ফেনী জেলা রোভার ইউনিট ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রোভার স্কাউট গ্রুপের প্রশিক্ষণ স্তরের দশজন রোভার সদস্যদের তিনটি রোভার দল একসঙ্গে ভিন্ন রুটে পাঁয়ে হেটে পাঁচ দিনে ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পরিভ্রমণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, রোভার স্কাউটিংয়ের সর্ব্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট'স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড' অর্জনের লক্ষ্যে তারা এই পরিভ্রমণ করেন। তাদের পরিভ্রমণের 
 প্রতিপাদ্য ছিল ‘হাঁটছি আমরা শৃঙ্খলা সাহস ও মানবতার বার্তা নিয়ে’ এই লক্ষ্য পূরণে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রোভার স্কাউট গ্রুপের  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের প্রথম দলের দলনেতা জয় প্রকাশ কর্মকার ও সদস্য  মোঃ মাঈন উদ্দিন, মিজান ইবনে সামাদ দিপু। ফেনী-ঢাকা রুটের দ্বিতীয় দলের দলনেতা মোহাম্মদ মুজাহিদ ইসলাম সৌরভ, সদস্য,মোহাম্মদ আবদুস সামী, এহসানুল হক শিহাব ও .মোঃ ইমরান হোসেন রাকিব। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের তৃতীয় দলের দলনেতা সুলতান মাহমুদ মাহিন, সদস্য আবদুর রাশিদ, মোঃ জোবাইদুর রহমান ফাহিম গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা তাঁদের রুট অনুযায়ী ১৫০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণ শেষ করেন।

গত  ৭-১১ ডিসেম্বরে তাঁদের তিনটি দল পরিভ্রমণ শেষ করেন। প্রথম দল চট্রগ্রাম কলেজ হতে যাত্রা শুরু করে ১ম দিন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ, ২য় দিন লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ, ৩য় দিন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ,  চতুর্থ দিন ঈদগাঁহ ফরিদ আহমেদ ডিগ্রী কলেজে যাত্রা বিরতি নেয় এবং রাত্রিযাপন করে। সর্বশেষ পঞ্চম দিন কক্সবাজার উপজেলা পরিষদে পরিভ্রমণ শেষ করেছেন।

দ্বিতীয় দল প্রথম দিন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় দিন কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, তৃতীয় দিন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, দাউদকান্দি, চতুর্থ দিন সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদে যাত্রা বিরতি নেয় এবং রাত্রিযাপন করে। সর্বশেষ পঞ্চম দিন জাতীয় স্কাউট সদর দপ্তর, ঢাকায় পরিভ্রমণ শেষ করেছেন। সেখানে তারা বাংলাদেশ স্কাউটস উপ-প্রধান জাতীয় কমিশনার  মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, বাংলাদেশ স্কাউটস, রোভার অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মোঃ শামসুল হক ও আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ আবুল খায়েরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। 

তৃতীয় দল চট্রগ্রাম কলেজ হতে যাত্রা শুরু করে প্রথম দিন গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ। দ্বিতীয় দিন লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ, তৃতীয় দিন চকরিয়া উপজেলা পরিষদ। চতুর্থ দিন ঈদগাঁহ ফরিদ আহমেদ ডিগ্রী কলেজে যাত্রা বিরতি নেয় এবং রাত্রিযাপন করে। সর্বশেষ পঞ্চম দিন কক্সবাজার উপজেলা পরিষদে পরিভ্রমণ শেষ করেছেন।

এই পরিভ্রমণে তিনটি রোভার স্কাউটস দলকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ স্কাউটস, ফেনী জেলা রোভার ও সম্পাদক ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রোভার স্কাউট গ্রুপের রফিক আহমেদ। 

তিনি বলেন, এই অভিযান বাংলাদেশ স্কাউটসের যুবশক্তিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় করে তোলার এক অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। এই পরিভ্রমণের উদ্যোগটি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। স্কাউট কর্মকর্তাদের মতে, এই উদ্যোগ আন্তঃজেলা সহযোগিতা বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় অভিযানের পথ খুলবে। তিনি আরও বলেন, তারা সফলভাবে পরিভ্রমণ সম্পূর্ণ করেছে দেখে আমি আনন্দিত। 
তারা ভবিষ্যৎ রোভারিং জীবনে সফল হোক এই কামনা করি।

প্রথম দলের দলনেতা জয় প্রকাশ কর্মকার বলেন,
বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার শাখার সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড (PRS) অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি রোভার দল ৭ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পরিভ্রমণে অংশগ্রহণ করি। আমাদের মধ্যে দুটি দল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং একটি দল ফেনী থেকে ঢাকা পর্যন্ত পরিভ্রমণ সম্পন্ন করে। এই পরিভ্রমণে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে দৃঢ় রাখার ক্ষমতা। দলের একজন পরিভ্রমণকারী হিসেবে আমি অনুভব করেছি- ১৫০ কিলোমিটার পথ শুধু শারীরিক পরিশ্রম নয়, এটি মানসিক শক্তি, দায়িত্ববোধ এবং নিজের ওপর আস্থা তৈরির বাস্তব পরীক্ষা।

পরিভ্রমণকারী দ্বিতীয় দলের দলনেতা মোহাম্মদ মুজাহিদ ইসলাম সৌরভ বলেন, রোভার স্কাউট শাখার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রেসিডেন্ট'স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য পায়ে হেঁটে ১৫০কি.মি পরিভ্রমণ আমাকে স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এটা আমার জীবনে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা, নিষ্ঠা ও ধৈর্য ধারণ করার এক অন্যান্য অভিজ্ঞতা দিয়েছে।  আমি বিশ্বাস করি আমাদের  কষ্টসাধ্য এই পরিশ্রম সকলের দোয়ায় একদিন সার্থক হবে। 

পরিভ্রমণকারী তৃতীয় দলের দলনেতা সুলতান মাহমুদ মাহিন বলেন, এই পরিভ্রমণের মাধ্যমে  প্রকাশ হয়েছে আমাদের ধৈর্য, প্রতিকূল পরিবেশে  টিকে থাকা এবং মানুষের সেবায় নিজেদের তুলে ধরা। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পরিভ্রমণে অংশ নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

উল্লেখ্য,রোভার স্কাউটিংয়ের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউট’ অর্জনের জন্য একজন রোভারকে ছয়টি পারদর্শিতা ব্যাজ অর্জন করতে হয়। এই পারদর্শিতা ব্যাজগুলোর অন্যতম ‘পরিভ্রমণকারী ব্যাজ’।রোভারিংয়ের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট’স রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ড (পিআরএস) অর্জনের লক্ষ্যে নির্ধারিত এই পরিভ্রমণ কার্যক্রমকে স্কাউটিংয়ে ‘র‍্যাম্বলিং’ বা ‘পরিভ্রমণ’ নামে অভিহিত করা হয়।