অনলাইনে বেচাকেনায় সারাবিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হালচালের ছোঁয়া লেগেছে ফেনীতেও। বিগত ৪-৫ বছর অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে বহুগুণ। প্রযুক্তি সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ফেনীতেও বিগত বছরগুলোতে অনলাইনে বেচাকেনার ক্ষেত্রটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আম মৌসুম এলেই ফেনীতে অনলাইনে আম বিক্রির মহোৎসব শুরু হয়। অনেকেই অন্য পেশার পাশাপাশি বাসা থেকে, কেউবা নিজস্ব অফিস নিয়ে ফেনীতে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করছেন। উদ্যোক্তাদের আশা করছেন, এবার ফেনীতে অনলাইনে আম বিক্রির বাজার আট-দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন ধরনের কাঁচা আমের আচার বানান উদ্যোক্তারা। এরপর ধাপে ধাপে আসে হিমসাগর, ল্যাংড়া, আ¤্রােপালি, হাঁড়িভাঙাসহ বাগানের পরিপক্ব নানান জাতের আম। দেশের সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুরসহ আরও কয়েকটি জেলার আম ফেনীতে নিয়ে আসেন তারা। গ্রাহক পর্যায়ে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও কেমিকেলমুক্ত আমের চাহিদাকে মাথায় রেখে সরাসরি বাগান থেকে আম সরবরাহ করেন উদ্যোক্তারা।

ফেনীতে অনলাইনে আমের আচার বিক্রির জন্য দারুচিনি এর উদ্যোক্তা তানজীনা খোন্দকার বলেন, এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার আমের আচার বিক্রির আশা করছি। উদ্যোক্তা তানজীনা খোন্দকার ছাড়াও আরও অন্তত ৫০জন নারী উদ্যোক্তা ফেনীতে ঘরের তৈরি আচার তৈরি করেন।

মসজিদে ইমাম ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি অনলাইনে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করেন লেমুয়া ইউনিয়নের মাওলানা নুরুল আলম। তিনি বলেন, অনলাইনে দশ লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রির আশা করছি আমি।

শহরের দাউদপুরস্থ জিলবাব বিডির পরিচালক মেজবা উদ্দিন জানান, এবার আমরা ৩০ লাখ টাকার অধিক আম বিক্রির আশা করছি। ক্রেতাদের আগ্রহ এবং বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এবারের আম ব্যবসা লাভজনক হবে বলে আমরা আশাবাদী।

সোনাগাজীর উদ্যোক্তা বেলায়েত হোসেন পিকলু বলেন, গত বছর আমি ১৬ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। এবার ২০-২৫ লাখ টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছি।

দাগনভূঞা তরুণ উদ্যোক্তা ইফাদ উদ্দিন বলেন, আমি অনলাইনে আগে থেকে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি আমসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করি। এবারও আম বিক্রি শুরু করেছি। এবার ১০-১২ লাখ টাকা আম বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে।

শহরের নাজির রোডস্থ বন্ধন ফার্মা ও অর্গানিক শপ পাঁচ বছর ধরে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন। এর পরিচালক নজরুল ফরায়েজি জানান, তিনি এবার ৮-১০ লাখ টাকার অধিক আম বিক্রির প্রত্যাশা করছি।

শহরের আরেক উদ্যোক্তা সহজবাজারের রাশেদ খান রাজু বলেন, সারাবছরই আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার নিয়ে কাজ করি। তবে আমাদের সবারই মূল ব্যবসায়ের মৌসুম হলো আম। আমি এবার ১০-১২ লাখ টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছি।

অনলাইন ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম ই-ফাতাহ সূত্রে জানা যায়, ফেনীতে অনলাইনে নিরাপদ খাবার নিয়ে কাজ করেন অন্তত শতাধিক উদ্যোক্তা। আমের মৌসুম (মে-আগস্ট) এলেই এ সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অন্তত কয়েকশ উদ্যোক্তা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আম নিয়ে কাজ করেন। সবার সম্মিলিত বিক্রির বাজার ৮-১০ কোটি টাকা হতে পারে।

ই-ফাতাহর পরিচালক জাহাঙ্গীর লিটন জানান, “আমরা সারাবছরই নিরাপদ খাবার নিয়ে কাজ করি। তবে আম এলেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ। আমরা এ বছর বিশ লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছি।

উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক শরিফুল ইসলাম অপু বলেন, অনলাইনে এত বিশাল আমের বাজার তৈরির ব্যাপারটা ইতিবাচক। কারণ, তরুণ প্রজন্মের মাঝে কাজ করে উপার্জনের একটা প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এটা যদি সঠিক পদ্ধতিতে না হয়ে থাকে, তবে সেটি উদ্বেগজনক। যেমন প্রায়ই শুনি যে, একদম বাগান থেকে পেড়ে আনা আম বিক্রি হচ্ছে এটির সত্যতা কতটা? এছাড়াও দাম ও মান নিয়েও একটা বিভ্রান্তি থাকে। তরুণদের এগুলোকে সঠিক স্থানে আনার পরিকল্পনা করতে হবে। তবে এ বাজার বড় ও আরও সম্ভাবনাময় হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ফেনী শহরের ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী নুর নবী হাসান বলেন, আমি বহু আগে থেকেই অনলাইনে বিভিন্ন পেইজ থেকে আম কিনি। আমার কাছে বাজার বা আড়তের আম থেকে এ আমগুলো বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর মনে হয়। তবে দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে এটি কেনা সম্ভব হয় না। তাই দাম কমাতে উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করা উচিত।