সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত উন্নয়ন ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ফেনী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে উন্নয়ন তহবিল ফি একবার নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও কলেজের স্নাতক ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুই দফায় এ ফি আদায় করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.১৫১.০৯.০০৩.২৩.১২৩, তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২৫ অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের থেকে উন্নয়ন তহবিল বাবদ প্রতি শিক্ষার্থী ১০০ টাকা করে শুধুমাত্র একবার (১ম বর্ষে) আদায়যোগ্য বলা হয়েছে। কিন্তু ফেনী সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ২ হাজার ৩৪৬ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উন্নয়ন ফি আদায় করা হয়েছে দুইবার।

কলেজের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সময় উন্নয়ন ফি হিসেবে ২০০ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বর্ষ পুনরায় একই খাতে আরও ২০০ টাকা দিতে হয়েছে তাদের। এতে মোট ২০০ টাকা হারে আদায় করে কলেজ কোষাগারে প্রতি বছরে জমা পড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন পরিপত্র কার্যকর হয়েছে নতুন অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুলাই থেকে। তাই আগের পরিপত্র অনুযায়ী ফি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র একবারই ১০০ টাকা হারে উন্নয়ন ফি আদায় করা হচ্ছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্র কার্যকর হওয়ার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরনো হারে টাকা নিয়েছে। ২২ এপ্রিল ২০২৫ সালে ১০০ টাকা করে নেওয়ার পরিপত্র জারি করে পূর্বের ৬ জুলাই ২০১৪ সালের পরিপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ১৯ মে ২০২৫ তারিখে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার স্বাক্ষরিত সেশন ফি বিবরণীতেও দেখা যায়, উন্নয়ন তহবিল বাবদ ২০০ টাকা, অধিভুক্তি ফি ১০০ টাকা, এবং নিরাপত্তা ও মাস্টাররোল কর্মচারী খাতে ৭৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি, ক্রীড়া ফি, ম্যাগাজিন, রোভার বিএনসিসি, লাইব্রেরি, চিকিৎসা, আইসিটি, বিজ্ঞান ক্লাব, শিক্ষা সফর ফি আদায় করা হয়।

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী খাতে ৬৫০ টাকা করে আদায় করা হলেও বর্তমানে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। কলেজের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী থেকে এ খাতে বছরে আদায় হচ্ছে আনুমানিক দেড় কোটি টাকা। অথচ কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস বাবদ ব্যয় হয় বছরে প্রায় ৮০ লাখ টাকা, বাকিটা থেকে যায় কলেজ তহবিলে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ভর্তি বা ফরম পূরণের সময় বিস্তারিত ফি-তালিকা তাদের হাতে দেওয়া হয় না। শুধু মোট টাকা উল্লেখ থাকে, ফলে কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে তা জানা যায় না।

ওমর ফারুক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের সব টাকা অনলাইনে জমা দিতে হয়। নোটিশে শুধু মোট পরিমাণ জানানো হয়, খাতভিত্তিক বিবরণ দেওয়া হয় না।

আরেক শিক্ষার্থী তারেক হাসান বলেন, পরিপত্র অনুযায়ী উন্নয়ন ফি ১০০ টাকা একবার দেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে দুইবার ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বাড়তি টাকা কেন নিচ্ছে, সেটি আমরা বুঝতে পারছি না।

অভিযোগের বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার বলেন, নতুন পরিপত্র অনুযায়ী জুলাই মাস থেকে ১০০ টাকা একবারই নেওয়া হচ্ছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যে টাকা আদায় হয়েছে, তা আগের পরিপত্র অনুযায়ী দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তখন ২০০ টাকা ছিল এবং প্রতিবছরেই দিতে হতো। জুলাই মাস থেকে বছরে একবার দেবে সেটি ১০০ টাকা। এখন থেকে সব শিক্ষার্থীদের টাকা কমে যাবে।

তিনি বলেন, মাস্টাররোল কর্মচারী ফি একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বাড়ানো হয়েছে। তহবিল শক্তিশালী হলে কমিয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজন মিটে গেলে সেটি আবার কমাতে পারব। তহবিল একটু শক্তিশালী হলে কমিয়ে দেব। উদ্বৃত্ত টাকা অনির্ধারিত অনেক খাতে ব্যয় হয়। কলেজের মামলার খরচ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চেয়ার-টেবিল ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি কাজ থাকে। এখন নতুন কর্মচারী বাড়ানো হচ্ছে, আনসার নিয়োগ দেওয়া হবে।অভ্যন্তরীণ খরচ গুলো এখান থেকে মেটানো হচ্ছে।