এন্ট্রি পদে ৯ম গ্রেডসহ চার দফা দাবিতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছে ফেনী সরকারি পাইলট ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা চলমান বার্ষিক পরীক্ষা ও এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা বর্জন এবং খাতা মূল্যায়ন থেকেও বিরত রয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, এসব দাবিগুলো দীর্ঘদিনের। এরমধ্যে দাবি পূরণে কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই দাবি আদায়ের জন্য তারা আরও কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৯ জন ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৬ জন শিক্ষক এ কর্মবিরতি পালন করছেন।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) বিপুল সরকার বলেন, আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। কেন্দ্র থেকে পরবর্তী নির্দেশনা এলে কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থগিত পরীক্ষার বিষয়েও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকার যদি দাবিগুলো দ্রুত পূরণ করে, তাহলে শুক্রবার ও শনিবার—সাপ্তাহিক ছুটির দিনে—অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো নিয়ে আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করতে প্রস্তুত। বিদ্যালয়ে এবার ১ হাজার ২৮৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত চলমান নির্বাচনী ও বার্ষিক পরীক্ষা ১ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী সময়ে নতুন করে পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে।
এ ব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শীলা রানী সিংহকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
অন্যদিকে, পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষকদের এমন কর্মসূচি পালনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবকরা। আরিফুল ইসলাম নামে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এভাবে পরীক্ষার দিন সকালে স্কুলে গিয়ে ফিরে আসতে হবে এটি কল্পনাও করিনি। শিক্ষকরা আন্দোলন করবেন সেটি তাদের অধিকার, কিন্তু আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কেন এতে জড়িত হবে।
রাশেদুল ইসলাম নামে আরেক অভিভাবক বলেন, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হলেও আমাদের সন্তানদের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কখন এ পরীক্ষাগুলো নেবেন সেটিও নির্দিষ্ট করে বলছেন না। বছরজুড়ে বিভিন্ন কারণে এমনিতেই বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। তারমধ্যে শেষ সময়ে এসেও এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে আমাদের সন্তানরা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ দায় কে নেবেন?
ফেনীর দুইটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জানতে কথা হয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহর সঙ্গে। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, জেলার ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহরের দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছে। এ বিষয়ে অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মনিরা হক দৈনিক ফেনীকে বলেন, কর্মবিরতির বিষয়ে দুইটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আগে থেকে আমাদের জানাননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তারা পরীক্ষা স্থগিত করেছে। পরে সোমবার সকালে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যারা এ ধরনের কর্মসূচি পালন করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে, সোমবার সকালে বার্ষিক, নির্বাচনী ও বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে মাউশি। এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার যেকোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসাথে পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে ও নির্বিঘ্নে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং সব বিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রতি নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনপঞ্জি নির্ধারিত হয়েছে। একইসঙ্গে মাউশির পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানা গেছে।
চার দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবিগুলো হলো:
১. সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট দ্রুত প্রকাশ।
২. বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শূন্য থাকা বিভিন্ন পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা।
৩. সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান।
৪. ২০১৫ সালের পূর্বের বিধান অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বেতন সুবিধা পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
