সহকারি শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির মধ্যেই ফেনীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে ‘শিক্ষক’ ছাড়াই পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা গেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। কেবল প্রধান শিক্ষক একাই পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করছেন। পরীক্ষায় নিতে বিভিন্ন স্কুলে ছুটতে দেখা গেছে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। পরীক্ষা নিতে সহযোগিতা করেছেন অভিভাবকরাও। সোমবার (১ ডিসেম্বর) ফেনীর বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গতকাল দুপুরে ফেনী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সহকারি শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে কর্মবিরতি পালন করছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজি উল্লাহ পরীক্ষার হলে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বিতরণ করে চলে গেছেন। আর শিক্ষার্থীরা যে যার মত করে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আবার কোন কোন হল ঘুরে দেখা গেছে, পরীক্ষায় নিতে সহযোগিতা করছেন অভিভাবকরা। প্রথম দিন ইংরেজী বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বুঝতে সমস্যা হলেও যে যার মত করে খাতায় উত্তর লিখেছে। এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির চিত্র দেখা গেছে ফেনীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকরা পরীক্ষা নিতে প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ফেনীর ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৪৫ জন সহকারি শিক্ষক কর্মবিরতি পালন করছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরীক্ষার গ্রহণের এমন চিত্র দেখে হতাশ অভিভাবকরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেনী সরকারি মডেল স্কুলের একাধিক অভিভাবক জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মত প্রাথমিকেও পরীক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাবি জানান তারা। অভিভাবকরা আরও জানান, ইংরেজী প্রশ্নপত্র বুঝতে অনেকে বুঝতে কষ্ট হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করার মত কোন শিক্ষক ছিল না। এভাবে পরীক্ষা নিয়ে কি মূল্যায়ন হবে? প্রাথমিকে পড়াশোনা নিয়ে সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের বিমুখতা তৈরি হবে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক স্বপ্না মজুমদার বলেন, স্কুলে ডেপুটিশনসহ ১০ জন সহকারি শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। দাবি আদায়ে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। চাকুরীর শেষ পর্যায়ে এসেও কোন পদোন্নতি হয়নি। সহকারি শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার।

বিদ্যালয়ের আরেক সহকারি শিক্ষক নাজমুল ইসলাম বলেন, ভোটগ্রহণ, ভোটার তালিকা, টিকাদানসহ যাবতীয় কাজ করে থাকেন সহকারি শিক্ষকেরা। অথচ আজকে আমরা বৈষম্যের শিকার আমরা অবহেলিত। দশ বছর পরও আমরা টাইম স্কেল পাইনি। এক্ষেত্রে আমাদের চাকুরীর শর্ত পূরণ হচ্ছে না। আমাদের সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নবম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড পাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে শুধু অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও গোহাডুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন খোন্দকার জানান, ডিজি মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠভাবে প্রথম দিনের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলার ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতির মধ্যে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কয়েকটি বিদ্যালয় হতে অভিযোগ এসেছে। ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন আহাম্মদ জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অভিভাবক ও অফিস সহকারিরা সহযোগিতা করেছে। আশা করি এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

সহকারি শিক্ষকদের উপস্থিতি ছাড়া কিভাবে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে এ প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা র্ফিরোজ আহাম্মদ জানান, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বিশৃঙ্খলা করেছে অভিযোগ এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় আজ মঙ্গলবারও দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলবে শিক্ষকদের লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। যার ফলে দ্বিতীয় দিনের মতো স্থগিত থাকছে বার্ষিক পরীক্ষা। গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাসেম মোহাম্মদ শামছুদ্দীনের পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারও আগের মতোই পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে।