প্রতিশোধ নিতেই ফোন করে ডেকে নিয়ে দুই হাত কেটে নৃশংসভাবে ছাগলনাইয়ার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর ছয়ঘরিয়া গ্রামের মোঃ হানিফ (৩৫) নামে ওই যুবককে খুন করা হয়েছে-এমন দাবি নিহতের পরিবারের। আবার কার ভাষ্য, এলাকায় মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির প্রতিশোধ নিতে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ড নিয়ে দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে মিলেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। নিহত হানিফ নিজেই ছিলেন একজন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক, ডাকাতি প্রস্তুতি, মারামারি ও অস্ত্র আইনে ২০টি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্ধকার জগত ঘিরেই ছিল উত্তর ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে হানিফের পদাচরণা। ছিনতাইকারী থেকে হানিফ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্রবাজি, মাদক কারবার ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছর কয়েক আগে মাদক কারবার নিয়ে হানিফের হাতের একটি আঙ্গুলে আঘাত করে জনৈক ব্যক্তি। এর প্রতিশোধ নিতে ওই ব্যক্তির একটি হাত কেটে ফেলে হানিফ। গত সোমবার রাতে তার মরদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয়রা ধারণা করছেন, ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই দুই হাত কেটে ফেলে তাকে খুন করা হয়েছে। আবার কারও ভাষ্য, মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির প্রতিশোধ নিতেও তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে।

নিহত হানিফের মা জুবেদা খাতুন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় হানিফের মামার শ্যালক রেজাউল করীম জুনুর (৪৫) ফোন পেয়ে হানিফ ও তার দুই বন্ধু ফারুক (৩৫) ও রিয়াজকে (২৮) নিয়ে তার বাড়িতে যায়। সেখানে গেলে তাদের উপর জুনুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা করে। তাদের কাছ থেকে ফারুক ও রিয়াজ পালিয়ে এসে হানিফের উপর হামলার বিষয়ে আমাদের জানায়। এরপর আমরা হানিফকে খুঁজতে গিয়ে দেখি দুই হাত কেটে তাকে হত্যা করে ড্রেনের মধ্যে বিবস্ত্র করে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে। হানিফের মাথা, দুই হাত, পিঠে, মুখে ও পেছনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রেজাউল করীম জুনু উত্তর ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত আহাম্মদ উল্যাহর ছেলে।

পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহতের হাত দুটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। তাঁর হাত, মাথাসহ শরীরের অন্তত ১২টি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্তের পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দাফনের জন্য তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওসি বলেন, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড এবং কারা জড়িত, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ওসি আরও জানান, হানিফের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৯টি, ৩টি ডাকাতি প্রস্তুতি, বিষেশ ক্ষমতা আইনে ১টি, ৬টি মারামারি ও অস্ত্র আইনে ১টি মামলাসহ মোট ২০টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু মামলা থেকে ইতোপূর্বে সে অব্যাহতি পেয়েছে।