গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলেকে হারিয়েছি। মৃত্যুর আগে আমার ছেলে ঋণ করে যে ঘরটি তৈরী করেছিলো আগুনে পুড়ে শেষ গিয়েছে সেই ঘর ও সকল আসবাবপত্র। গত শনিবার (৩ মে) রাতে ছাগলনাইয়ার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর সিংহনগর চৌধুরী বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো এক বৃদ্ধা মা দৈনিক ফেনীকে এমনটি জানান। রান্নাঘরের গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত হয়ে পাশাপাশি আট পরিবারের বসতঘর, রান্নাঘর ও নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কাসরসহ সকল আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। এতে আট পরিবারে অন্তত এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন, আবু তাহের চৌধুরী, নাছির উদ্দিন, আবু বক্কর, জিয়া উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, সিরাজ উদ-দৌলা, ইয়াছিন আরাফাত আতিক ও বেলায়েত হোসেন।

ক্ষতিগ্রস্ত আবু তাহের চৌধুরী প্রকাশ সোহাগ মাস্টার জানান, ছেলেকে প্রবাসে পাঠানোর জন্য ঘরে ২ লাখ ৫০ টাকা, মেয়ের আড়াই ভরি ওজনের স্বর্ণসহ আমার সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে।

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিবু দাশ সৌমিত। এসময় তিনি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন এবং নির্ধারিত ফরমে আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে অর্থ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেছেন।

অগ্নিকাণ্ডে একই বাড়ির আট পরিবার সর্বস্ব হারানোর খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য ও করৈয়া বহুপার্শ্বিক উচ্চ বিদ্যালয় এক্স-স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা। তিনি জানান, অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। ফায়ারসার্ভিস, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি।

অগ্নিনির্বাপনে সময় ক্ষেপণের অভিযোগ

ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুর সিংহনগর চৌধুরী বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পৌছানোর ২৫-৩০ মিনিট পর ফায়ারসার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে পৌছানো এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর যন্ত্রাংশের ত্রুটির জন্য অগ্নি নির্বাপনের প্রস্তুতি নিতে আরো ১০-১৫ মিনিট সময় ক্ষেপণের অভিযোগ ওঠেছে। গতকাল রবিবার অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়ে এমন অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাগলনাইয়া উপজেলা শাখার প্রতিনিধি মোঃ এমদাদ হোসাইন দৈনিক ফেনীকে জানান, এ বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত হলে ঘোপাল ইউনিয়ন ছাত্র প্রতিনিধি মোঃ শোয়াইব স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্তৃপক্ষকে মুঠোফোনে অবহিত করে। ফায়ারসার্ভিস স্টেশন থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থলে আসতে যেখানে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে তারা আসতে সময় লাগে ২৫-৩০ মিনিট। এছাড়াও অগ্নি নির্বাপনের যন্ত্রাংশের ত্রুটি থাকায় পানি নিক্ষেপ করতে আরো ১০-১৫ মিনিট সময় ক্ষেপণ করে। এসময় তিনি ছাগলনাইয়া ফায়ারসার্ভিস স্টেশনে আধুনিক ও উন্নতমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার দাবি জানান। তবে অভিযোগ গুলো সঠিক নয় দাবি করে ফায়ারসার্ভিস ছাগলনাইয়া স্টেশন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) পুলক বড়ুয়া জানান, যাদের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিলো তাদের মাঝে এক পরিবার আমাদের অফিসের পাশে বসবাস করেন এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শুনে তারা আমাদের অফিসে এসে দেখতে পায় ফায়ারসার্ভিস কর্তৃপক্ষ অগ্নি নির্বাপনের জন্য ইতোপূর্বে রওয়ানা হয়েছে।

তিনি জানান, ছাগলনাইয়া পৌর শহরের প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় আমাদের টিম ঘটনাস্থলে যেতে কিছুটা বিলম্ব হলেও সময় ক্ষেপণ হয়নি। এছাড়া অগ্নি নির্বাপনে যন্ত্রাংশের ত্রুটির অভিযোগটিও সঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি জানান, পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের এক পর্যায়ে পাইপের সাথে কিছু ময়লা জমে থাকায় ময়লাগুলো পরিষ্কার করে পুনরায় পানি সংগ্রহ করা হয়। পৌর শহরের প্রধান সড়কের সংস্কার কাজের জন্য ফায়ারসার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়ে এমদাদ হোসাইন জানান, সড়ক সংস্কার কাজ চলমান থাকার বিষয়টি ফায়ারসার্ভিস কর্তৃপক্ষ জেনেও বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি।