ছাগলনাইয়া আমানত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে গ্রাহকের দশ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। টাকার দাবিতে গতকাল রোববার (৫ অক্টোবর) ছাগলনাইয়া পৌরসভার জিরো পয়েন্ট ও রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৃথক মানববন্ধনের আয়োজন করে ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা, জমি ও গহনা বিক্রির টাকা লাভের আশায় সাধারণ সঞ্চয়, ডিপিএস, মাসিক মুনাফা ভিত্তিক ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছিলেন ছাগলনাইয়া আমানত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে। এতে উপজেলার বিত্তবান থেকে শ্রমজীবী সকল শ্রেণিপেশার মানুষের টাকা সঞ্চিত রয়েছে। উপজেলার অন্তত পাঁচ হাজার গ্রাহক এ প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় ও ঋণ গ্রহণ করে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব রক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে চার হাজার গ্রাহক লেনদেন করেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মো. জামশেদ আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক দ্বীন মোহাম্মদ মজনু হাজারো গ্রাহকের অন্তত দশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মো. জামশেদ আলম চৌধুরী হঠাৎ করে পালিয়ে যান। এর পর থেকেই গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জমাকৃত টাকা ফেরত চাইলে বারবার “পরে দেওয়া হবে” বলে ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়। আমানত মাল্টিপারপাসে মোটা অংকের টাকা জমা রাখা হাজারো গ্রাহক তাদের রক্ষিত টাকা ফেরত পেতে প্রতিদিন অফিসে যোগাযোগ করেও শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী সুমন মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের জমাকৃত টাকা আত্মসাৎ করে জামশেদ ও মজনু দেশ বিদেশে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, সভাপতি জামশেদ পালিয়ে যাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সাধারণ সম্পাদক মজনুর নিকট টাকা চাইতে গেলে সে গ্রাহকদের গালমন্দ করে এবং মামলার হুমকি দেয়।

ইলিয়াছ মজুমদার জুলহাশ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমানত মাল্টিপারপাসের কর্ণধাররা আমাদের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি এখনও গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছে, কিন্তু পাওনা টাকা ফেরত দিচ্ছে না। দ্রুত ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।

প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এদের মধ্যে চারশ গ্রাহকের আমানত মাল্টিপারপাসের নিকট আট কোটি টাকা পাওনা রয়েছে এবং আমানত মাল্টিপারপাস ঋণগ্রহীতাদের নিকট দশ কোটি টাকা পাওনা। ঋণগ্রহীতারা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায়, পাওনাদার গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

এ বিষয়ে আমানত মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ-এর সাধারণ সম্পাদক দ্বীন মোহাম্মদ মজনু জানান, গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানের নিকট টাকা পাবে এটা সত্য। তবে যাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে, তাদের মধ্যে অনেকের কাছ থেকে গত বছর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জামশেদ আলম টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে আমরা ঋণের টাকা ফেরত পাচ্ছি না। এজন্য পাওনাদার গ্রাহকদের টাকা পরিশোধে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

মজনু আরও জানান, গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভেবে পলাতক সভাপতি জামশেদ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যা বর্তমানে আদালতে চলমান। এছাড়া যাদের কাছে প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে, তাদের মধ্যে কিছু খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা এবং উকিল নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের মানববন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু লোকও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণগ্রহীতার। তাই তাদের অংশগ্রহণ হাস্যকর বিষয়। মূলত প্রতিষ্ঠানের পাওনা টাকা পরিশোধ না করার পেছনে পলাতক সভাপতির ইন্ধন কাজ করেছে, এবং তারই প্রভাবে একটি অংশ মানববন্ধন আয়োজন করেছে।