১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাগলনাইয়ার শহীদ জিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় ৩৭ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিগত সরকারের সময়ে একাধিকবার এ মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বরাদ্দের আবেদন করেও ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বরাদ্দ না পাওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নামকরণে ‘শহীদ জিয়ার’ নাম থাকাকে দায়ী করছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবু আহমদ জালালুদ্দীন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নূরানী শিক্ষার মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের পথ চলার শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে জুনিয়র ও মাধ্যমকি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৯৪ সালে এ মাদ্রাসা থেকে দাখিল প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ১৯৯৫ সালে শহীদ জিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। পরবর্তী ২০০২ সাল থেকে চালু হয় আলিম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এ মাদ্রাসায় আলিমেও এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বরাবরই ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় এ মাদ্রাসা থেকে ১১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে শহীদ জিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তত ১৫টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান মাত্র দশটি কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে পাঠদান। শ্রেণিকক্ষ সংকটে একাধিক শ্রেণির পাঠদান একটি কক্ষে পরিচালিত করতে হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু আহমদ জালালুদ্দীন জানান, একটি আলিম মাদ্রাসায় যে পরিমাণ শ্রেণিকক্ষ ও অবকাঠামো থাকার প্রয়োজন তার অর্ধেকও এ মাদ্রাসায় নাই। শ্রেণিকক্ষ সংকট, মেয়ে শিক্ষার্থীদের ইবাদতখানা সংকট ও আধুনিক শৌচাগার সংকটসহ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে মাদ্রাসার দৈনন্দিন শিক্ষা কার্যক্রম। অধ্যক্ষ বলেন, মাদ্রাসাটি শহীদ জিয়ার নামে নামকরণ হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বিগত সরকারের সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিরীন আকতারের কাছে মাদ্রাসার নতুন ভবনের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হলে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন-এ মাদ্রাসার জন্য ডিও লেটার দিলে আমার পদবী থাকবে না। সম্প্রতি এ মাদ্রাসার জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ প্রদান করার পরিকল্পনা থাকায় মাদ্রাসার চারকক্ষ বিশিষ্ট একটি পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে জানতে পারি নতুন ভবন বরাদ্দ বাতিল হয়েছে। ফলে বর্তমানে শ্রেণিকক্ষ সংকটে এ মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি মো. ইস্রাফিল হোসেন জানান, একটি আলিম মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য যে জমি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রয়োজন তার সবকিছু থাকায় শহীদ জিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জমিদানসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কাজ করেছি। সময়ের ব্যবধানে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকায় শ্রেণিকক্ষসহ নানা সংকটের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। মাদ্রাসার নাম থেকে শহীদ জিয়ার নাম পরিবর্তন করলে এমপির কোটা থেকে নতুন ভবন বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এজন্য বিগত সরকারের সময়ে এ মাদ্রাসার উন্নয়নে কোন বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা জানান, মাদ্রাসার ভবন সংকটসহ যেসব প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেই বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান এডহক কমিটি লিখিত আবেদন করলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।