মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় ছাগলনাইয়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুহারা এক পরিবার। স্বামী সন্তান নিয়ে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে বিবি ছাবিরা খাতুন আঁখি (৩৮) নামক এক বাস্তহারা নারী। অসহায় এ পরিবারটি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ পুর এলাকার বাসিন্দা। অর্থ সংকটে কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে শহীদ মিনারের উন্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিয়েছে তারা। 

জানা গেছে, বিগত ছয় মাস এভাবেই দিন কাটছে তাদের। নবজাতক দুই পুত্র ও এগারো বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রোধে শুকিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে আঁখি দম্পত্তি। কনকনে শীতের মৌসুমে শিশু সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন ও ভোর বেলায় চরম কষ্ট পাচ্ছেন আঁখি। ছাবিরা খাতুন আঁখির স্বামী হাবিবুর রহমান সবুজ দীর্ঘদিন ছাগলনাইয়া পৌরসভার ঝাড়ুদার পদে কাজ করেন। হঠাৎ সেই কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে সবুজ। পরবর্তীতে সংসারের হাল ধরতে সে মেথরের কাজে নেমে পড়ে। ছয় বছর পুর্বে আঁখি তার সন্তানদের নিয়ে স্বামীর কর্মস্থল ছাগলনাইয়া আসে। ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরে বিনা ভাড়ায় চলছিলো তাদের বসবাস। ২০২৪ এর বন্যা পরবর্তী সময়ে সেই সুখের ঘরে বিষধর সাপের উপদ্রপ দেখা দেয়ায় ছাড়তে হয় ঘরটি। চাকরিচ্যুত স্বামী মেথরের কাজ করে অতি অল্প রোজগার করায় বাসা ভাড়া নেয়ার সামর্থ নাই। চারদিকে ছোটাছুটি করে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তারা আশ্রয় নেয় শহীদ মিনারের উন্মুক্ত স্থানে। বিগত বেশ কয়েক মাস এভাবেই চলছে তাদের সংসার জীবন। 

অন্যদিকে, নবাজত দুই শিশুকে টানা কয়েক মাস খোলা আকাশের নিচে রাখায় তারা জটিল রোগে ভুগছে বলেও ধারণা করছে আঁখি। এ বিষয়ে ছাবিরা খাতুন আঁখি দৈনিক ফেনীকে জানায়, টানা কয়েক মাস এভাবে খোলা আকাশের নিচে দিনরাত কাটাচ্ছি। দুই শিশুকে বুকের দুধ ছাড়া কিছু মুখে দেয়ার সামর্থ নাই। কেউ কিছু খেতে দিলে সবাই সামান্য খাই। শহীদ মিনারে আশ্রয় নেয়ায় রান্না করে খাওয়ার সুযোগ নাই। আশপাশে মলমূত্রত্যাগ করার ব্যবস্থাও নাই। শীতের রাতে বাচ্চাদের গায়ে জড়ানোর জন্য নেই কোন শীতবস্ত্র। 

তিনি জানান, গ্রামের বাড়ীতে ভিটেমাটি না থাকায় ছাগলনাইয়ায় এসেছি। এখন অর্থ সংকটে বাসা ভাড়া নিতে না পারায় অবুঝ শিশুদের নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি। তিন অবুঝ শিশুর কষ্টের দিক বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে অথবা বিত্তবানদের প্রতি মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে আকুতি জানিয়েছেন এই নারী।