এক বছর না পেরুতে আবারও ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরশুরামের জনপদ। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যার ধকল এখনো কাটাতে পারেনি মানুষ। এরমধ্যে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙনে বসতঘর হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। এছাড়া কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি টাকারও বেশি।

জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানিতে ৮ জুলাই থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৪ টি স্থান ভেঙ্গে উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া,বক্সমাহমুদ ইউনিয়ন ও পরশুরাম পৌরসভার প্রায় ৩০ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। মধ্যম ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, শালধরে তিনটি ও পশ্চিম অলকা গ্রামের মূহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পাঁচটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম গদানগর,জঙ্গলঘোনা, উত্তর মনিপুর দাসপাড়া, মেলাঘর কবরস্থানের পাশে সিলোনিয়া নদীর চারটি, দক্ষিণ বেড়াবাড়িয়া ও উত্তর টেটেশ্বরে কহুয়া নদীর দুইটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়।

মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া, পশ্চিম অলকা,নোয়াপুর,সাতকুচিয়া, পূর্ব অলকা,জঙ্গলঘোনা,পশ্চিম গদানগর,মধ্যম ধনীকুন্ডা, উত্তর ধনীকুন্ডা, নোয়াপুর, বাউরপাথর, বাউরখুমা, উত্তর মনিপুর, মধ্যম মনিপুরসহ ৩০ গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। স্কুল, কলেজ মাদরাসাসহ বিভিন্ন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করে মানুষ। পানি কমার সাথে সাথে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ফুটে উঠেছে। বন্যার পানির তোড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেসে গেছে।

মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির এখনো নিরুপণ করা যায়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজীব আহমেদ জানান, মানুষের বাড়িঘর ভেসে গেছে। এসব ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

মধ্যম ধনীকুন্ডায় মূহুরী নদীর ভাঙ্গনে ঘর হারিয়েছেন বিমল দাস। তিনি জানান, ভাঙ্গনের সাথে বন্যায় নিয়ে গেছে বসত ঘর।কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। এখন থাকার জায়গাটুকু নেই।

বন্যায় ভেসে গেছে মৎস ও পোল্ট্রি খামার, আমনের বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বন্যা পানিতে আমনের ১৫০ হেক্টর বীজতলা,আউশ ধান ৪০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালিন সবজি ৯০ হেক্টর, মরিচ ২ হেক্টর,আদা ১, হেক্টর, হলুদ ৫০ শতকসহ তলিয়ে গেছে। সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, বন্যার পানিতে ২ টি গরু, ১ টি ছাগল, ৭২০০ মুরগি,২৩৫ টি হাঁস মারা গেছে। ১৫ টি গবাদিপশুর খামার ও ১৭ টি হাঁস মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৩৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পশ্চিম অলকা গ্রামের খামারি আবুল হোসেন জসিম বলেন,মূহুরী নদীর সবচেয়ে বড় ভাঙ্গনটি আমার বাড়ির মুখে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে পানির ধাক্কায় খামার ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। খামারে থাকা ৮টি গরু বাড়ির ছাদে তুলে জীবন বাঁচিয়েছি।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে

উপজেলা মৎস অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ১৩০ টি পুকুর ও মৎস্য ঘের থেকে ৫৫ মেট্রিক টন মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামার ও পুকুরের পাড়। মৎস খাতে ক্ষতি প্রায় কোটি টাকা।

এদিকে শনিবার সকালে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। বন্যার মূল উৎস ভাঙ্গনের শিকার পরশুরামের বল্লামুখা ও নদীর বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে।