পরশুরামের কিসমত টেটেশ্বর গ্রামে একের পর এক চুরির ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্পাদ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এ গ্রামের মানুষ। এখানে রাত বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায় মানুষের আতঙ্ক। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চুরি। গত ছয় মাসে এ গ্রাম হতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, মোটরসাইকেল, টমটমের ব্যাটারি, পানি তোলার মোটর চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও থামেনি চুরির ঘটনা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮-৯ মাসে এ গ্রাম হতে তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, চারটি টমটম, তিনটি মোটরসাইকেল, ছয়টি টমটমের ব্যাটারি, বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানির মোটর চুরি হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে কিসমত টেটেশ্বরের মজুমদার বাড়ি থেকে মোঃ সেলিমের সিএনজি চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ৬ অক্টোবর চুরি হয় শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সিএনজি। এরপরে চুরি হয় একই গ্রামের আবদুর রহিমের সিএনজি।
২৭ সেপ্টেম্বর রাতে খন্ডল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলামের ওয়ান স্মার্ট প্লাস মডেলের মোটরসাইকেল বাসার সামনে থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এর আগে এই শিক্ষকের আরও একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। ১৯ এপ্রিল রাতে কলাপসিবল গেটের তালা কেটে বাসার সামনে থেকে ডিসকভার ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল চুরি হয়। আরিফুল ইসলাম কিসমত টেটেশ্বর গ্রামের রশিদ কাজী বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেখান থেকেই তার দুটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এর পাশে মালেক কাজী বাড়ির মারকাজুত তাকওয়া মাদ্রাসার মোটর খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
আরিফুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ কয়েকবার তদন্তে এসেছে। কিন্তু চোর শনাক্ত করতে পারেননি। তারা বাড়ির মালিককে বারবার সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
চুরি হওয়া সিএনজির চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, যেদিন রাতে আমার সিএনজিটি চুরি করা হয়, বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরায় চোরদের দেখা গেছে, কিন্তু ঝাপসা থাকায় তাদের শনাক্ত করা যায়নি।
শুধু সিএনজি বা মোটরসাইকেল নয়। চুরি হয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের টমটম ও ব্যাটারি। গত ৮ জুলাই রাতে জয়নাল আবদিন, ২০ এপ্রিল রাতে শরিফুল ইসলাম, গত রোজার মাসে জালাল আহমদ ও পার্শ্ববর্তী চারিগ্রামের দেলোয়ার হোসেনের টমটমের ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্ত। এ বছর গ্রাম থেকে তিনটি টমটম চুরির অভিযোগ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী চারিগ্রাম ও কহুয়া থেকেও সিএনজি টমটম চুরির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে একের পর এক চুরির ঘটনার এ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। সিএনজি, টমটম ও গরু পাহারা দিতে অনেকে বাইরে রাত্রি যাপন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের (৬০) জানান, আমরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে আছি। রাত হলে চোর পাহারা দিতে হয়। অনেকে টমটম ও সিএনজির ভেতর ঘুমান, কেউ রাস্তা পাহারা দেয়।
একটি সূত্র জানায়, এখানকার স্থানীয় একটি চক্র ও ফুলগাজীর আমজাদ হাটের দুর্বৃত্তরা মিলে এসব অপকর্ম করছে। ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈরাগপুর গ্রামের পরে কিসমত টেটেশ্বর গ্রাম। স্থানীয়দের দাবি দুই উপজেলার প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিলে দুর্বৃত্তদের সনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম এ বিষয়ে বলেন, চুরির ঘটনায় অভিযোগগুলো তদন্ত করে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। গ্রামগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।