পরশুরাম পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। ভুতুড়ে বিল, মিটার পেতে জটিলতাসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। গ্রাহকদের কাছ থেকে দালাল ও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
‎পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় ৩৩ হাজার বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন। এর বাইরে যেসব বাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ যায়নি, সংযোগ নিতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে দালালের কাছে। অভিযোগ রয়েছে, দালালচক্র মিটারের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে তিন- চার হাজার টাকা নিয়ে হয়রানি করে।

‎ভুক্তভোগী গ্রাহক দক্ষিণ কাউতলী গ্রামের বাসিন্দা জুলেখা আক্তার বলেন, বন্যার কবলে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে মিটার খুলে নিয়ে যায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। বিল পরিশোধ করিনি এমন অভিযোগ তুলে তারা মিটারটি আর স্থাপন করেনি। পুনরায় মিটার স্থাপনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে সেখানে ইদ্রিস নামে এক ইলেকট্রেশিয়ান ৪ হাজার টাকা দাবি করেন, টাকা দিলে মিটার লাগিয়ে দেওয়া হবে। ইদ্রিস নিজেকে পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগী গ্রাহক ডিজিএমের কাছে গিয়ে টাকা কেন দিতে হবে জানতে চাইলে, ডিজিএম তাঁর সাথে কোনো প্রকার কথা বলেননি বলে অভিযোগ করেন ওই নারী। ‎তিনি বলেন, ১৪ অক্টোবর দুপুরে ইলেকট্রিশিয়ান ইদ্রিস বাড়িতে এসে মিটার স্থাপনের জন্য ৭২০ টাকা দাবি করে জানায়, টাকা না দিলে মিটার দেওয়া হবে না। ‎ইদ্রিস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাজের পারিশ্রমিক চেয়েছি। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

‎পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাউরপাথর গ্রামের মোহাম্মদ রফিক মিয়ার ছেলে দাউদ নবী নতুন মিটারের জন্য আবেদন করেন চার মাস আগে। এতদিন অফিসে ঘুরেও নতুন মিটার লাগাতে পারেননি। তিনি বলেন, এর আগে আবেদন করার পর মোবাইলফোনে না পাওয়ার কথা বলে আবেদনটি বাতিল করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৬ জুন আবার আবেদন করার পরেও এখনো মিটার লাগানো হয়নি।

‎অন্যদিকে পৌর এলাকার দুবলাচাঁদ গ্রামের অনিক দাস বলেন, বাড়ির বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে অফিসের মনির হোসেন নামের এক কর্মকর্তা খুঁটি স্থানান্তর করার জন্য টাকা দাবি করেন। না হলে খুঁটি স্থানান্তর হবে না।
‎এছাড়া কাউতলী গ্রামের শফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, গত তিন মাস ধরে আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। সংযোগবিহীন থাকার পরও অযৌক্তিকভাবে বিল তৈরি করে পাঠাচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও কোন সদুত্তর পাই না। এভাবে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি।

‎এ বিষয়ে পরশুরাম পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সুহেল আখতার  (ডিজিএম) বলেন, অফিসে কয়েকজন ইলেকট্রিশিয়ান আছে। তারা নিয়োগপ্রাপ্ত নন। তাদের সঙ্গে কেউ টাকা পয়সার লেনদেন করলে সে দায়ভার অফিস নেবে না। আমরা চাইলেও এদের তাড়াতে পারছি না। গ্রাহক তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।