পরশুরাম অংশে শুরু হয়েছে ফেনী-বিলোনিয়া আঞ্চলিক সড়ক বর্ধিতকরণ কাজ। ২৮ কিমি দৈর্ঘ্যের সড়কটি প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা ব্যয়ে স্ট্যান্ডার্ড টু লেনে উন্নীতকরণ হচ্ছে। এতে ভূমি নিয়ে জেলার উত্তরের জনপদ পরশুরাম বাজারের ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, প্রশস্ত সড়ক ব্যবসা ও উন্নত যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি করবে-মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ চৌমুড়ি-উত্তর বাজারে কহুয়া নদীর ব্রিজ পর্যন্ত পরশুরাম বাজারের মূল অংশ। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, ১৭৮০ সালের দিকে পরশুরাম বাজারের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ মেলে। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে মুহুরী নদীর অববাহিকায় ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভকরে পরশুরাম বাজার। পরশুরাম দক্ষিণ চৌমুড়ি-বিলোনিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা। ১৯২৭ সালে পরশুরামে যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচন করে ফেনী-বিলোনিয়া রেল। বাজারের বুক চিরে স্থাপন করা হয় রেললাইন। তবে ১৯৯৭ সালে লোকসানের অজুহাতে বিলোনিয়ার রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরশুরাম থেকে ফেনী যাতায়াতে সড়ক পথ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২৮ কিলোমিটারের ফেনী-বিলোনিয়া সড়ক চলতি বছরের মে মাসে ফেনী সদর থেকে ফুলগাজী হয়ে পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমানে এ সড়কের প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার। তা এখন উভয়পাশে ৪ দশমিক ৮০ মিটার করে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩০ মিটার করা হচ্ছে। প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি কার্যাদেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্প। এর মধ্যে দুইটি কার্যাদেশে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পেয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যটি পেয়েছে মাইশা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বাজার বণিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ চৌমুড়ি-উত্তর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০ দোকানপাট রয়েছে। সড়ক ঘেষে রয়েছে পরশুরাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় জামে মসজিদ, বাসা-বাড়ি। এছাড়াও সড়কের দুই পাশে রয়েছে সরকারি খাস জমি, জেলা পরিষদ ও রেলওয়ের জায়গা। উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কোলাপাড়া মৌজায় ৮৯ একর সরকারি খাস সম্পত্তি রয়েছে। পরশুরাম বাজার অবস্থিত উত্তর কোলাপাড়া ও দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামে। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ভাঙা পড়তে পারে বাজারের দোকানপাট, বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
উত্তর বাজারের ইউসুফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রাহাদ মজুমদার বলেন, বাজারের উন্নয়নের জন্য সড়ক বড় হওয়া জরুরি। সরকার রাস্তা বড় করতে চাইলে আইন অনুযায়ী বৈধ জমির মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সড়কপ্রশস্ত করার আগে দুই পাশের ড্রেনগুলো করা না হলে বাজারে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। সামান্য বৃষ্টি হলে পানি উঠবে। সড়ক ও ড্রেনের জায়গা একসঙ্গে অধিগ্রহণ করা হলে বারবার ভোগান্তির চেয়ে বরং ব্যবসায়ী ও ভূমির মালিকদের সুবিধা হবে।
প্রায় দুই শতক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত মেসার্স অতুল মজুমদার মার্কেটের এক মালিক রতন চন্দ্র মজুমদার। তিনি জানান, স্টেশন রোড দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হলে বাজারের ব্যবসায়ী-রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে সরকার যদি একান্তই সড়কটি বড় করে সেক্ষেত্রে আইনগতভাবে ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছি।
মেসার্স ইরফানা গ্লাস হাউসের স্বত্বাধিকারী মনছুর উদ্দিন মজুমদার বলেন, এক শতক জায়গায় সরকারি খাস বন্দোবস্তে ব্যবসা পরিচালনা করছি। সরকার যদি বাজার ও জনগণের সুবিধার্থে জায়গা নিতে চায়, সেক্ষেত্রে ভূমির মালিকদের কয়েক মাস আগে থেকে নোটিশ দিলে অন্যত্র দোকান স্থানান্তর করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জন্যও সুবিধা হবে।
অন্যদিকে সড়কটি প্রশস্ত করা হলে পরিবহন ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে। ফেনী জেলার সঙ্গে পরশুরাম উপজেলার বাণিজ্য, যাতায়াত ও স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। পরশুরামের সন্তান দুবাইপ্রবাসী জাফর ইকবাল বলেন, বাজারে কিছু উচ্ছেদ শঙ্কা থাকলেও সড়ক প্রশস্ত হলে এর উপকার উপজেলার মানুষ দীর্ঘকাল পাবেন। সাময়িক শঙ্কার চেয়ে সম্ভাবনাকে বড় করে দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ফেনী-বিলোনিয়া স্ট্যান্ডার্ড টু লেন প্রকল্প বাস্তবায়নে উভয়পাশে ১০ দশমিক ৩ মিটার বা ৩৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তা প্রয়োজন। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে যথাযথভাবে অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সকলের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব।
