গেল বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানির সঙ্গে পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামে ভেসে আসা বালুতে এখনো ঢাকা পড়ে আছে কৃষিজমি। বালু ভরাট জমিতে আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। বন্যার পর থেকে জমিগুলো আবাদযোগ্য করার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় বন্ধ রয়েছে বালু ও মাটি সরানোর কাজ।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ফসলি জমি বালুতে চাপা পড়ে। উপজেলার মুহুরী নদীর তীরঘেষা চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামের আবাদি জমিতে ৪ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বালু স্তুপ পড়েছে। এসব জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন ও ধান চাষ করে কয়েক হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন।
বন্যার পরে জমি থেকে মাটি ও বালু সরানোর জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মৌখিক অনুমতি দেন। গত এক বছরে বেশ কিছু জমি থেকে বালু ও মাটি সরানো হয়েছে। তবে এখনো অধিকাংশ জমি বালু ও মাটিতে ভরাট হয়ে আছে। এতে বোরো ও আমন মৌসুমে ফসল আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৪’র বন্যার পরে পশ্চিম অলকায় প্রায় ২০০ হেক্টর কৃষি জমিতে বালু ও মাটিতে ভরাট হওয়ায় বোরো ও আমন মৌসুমে চাষাবাদ হয়নি। তবে অধিকাংশ জমির মাটি ও বালু সরানো হয়েছে। এখনো ১৫ থেকে ২০ হেক্টর জমিতে বালু ও মাটি থাকায় চাষাবাদ করতে পারেনি কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষি জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে বাড়তি ব্যয়ে বাজার থেকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে কৃষকদের। পশ্চিম অলকা গ্রামের বড় বাড়ির বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের ৮ কানি, আবুল হোসেন পেয়ারের ৫ কানি, আবু তাহের মামুনের ১৪ কানিসহ বহু কৃষক জমিতে ফসল ফলাতে পারেনি।
কৃষক আবুল হোসেন পেয়ার জানান, বন্যার পরে ১৪ কানি জমি থেকে একটু মাটিও সরাতে পারিনি। জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে আছে। বাজার থেকে উচ্চ দামে চাল কিনে পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
মো. জসিম উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, মাটি বিক্রি করা ছাড়া জমি চাষাবাদ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। প্রশাসন যেহেতু বিক্রিতে বাধা দিচ্ছে তাহলে তারাই জমির মাটি ও বালু তুলে নিয়ে যাক।
পশ্চিম অলকা গ্রামে মৌলভী মৃত আবুবক্করের বাড়ির সামনে রয়েছে একটি জামে মসজিদ। মসজিদের পুকুরে মাছ চাষ ও বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল প্রদানসহ মসজিদের আনুষাঙ্গিক খরচ মেটানো হতো। বন্যার কারণে বালু ও মাটি চাপায় পুকুরটি এখন ভরাট হয়ে গেছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ পুকুরের বালু ও মাটি সরানোর চেষ্টা করলে প্রশাসনের বাধায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
মসজিদের মুসল্লি রুবেল হোসেন জানান, মসজিদের বড় একটি পুকুর ছিল। বন্যায় এটি পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। পুকুরে পানি না থাকায় মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়তে এসে সমস্যার সম্মুখীন হন। পুকুরটি খনন করতে গেলে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। যারা বালু ও মাটি কিনছে তারা প্রশাসনের বাধায় সেটি খনন করতে পারছে না। এ পুকুরের মাছ চাষের আয় দিয়ে মসজিদের বিভিন্ন খরচ চলতো।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম শাফায়াত আকতার নূর বলেন, অধিকাংশ জমির বালু ও মাটি কৃষকরা ইতোমধ্যে সরিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে অনেকগুলো স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন বাধা দিয়েছে। যেসব জমিতে এখনো বালু ও মাটি রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জমির মালিকদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
