ষাটোর্ধ্ব জামাল উদ্দিন এসেছিলেন ফেনীর ভ্রাম্যমাণ বই মেলায়। দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ক্ষীণ হয়ে গেলেও বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তার একটুও কমেনি। তিনি বলেন, চোখে ঠিকভাবে দেখতে না পেলেও বই হাতে নিলেই মন ভরে যায়। বই পড়ার প্রতি ভালোলাগা এখনও আছে। এ কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত ভ্রাম্যমাণ বইমেলায়।
গতকাল শনিবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় শহরের নবীনচন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মেটলাইফ ফাউন্ডেশন ও ফেনী জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত ভ্রাম্যমাণ বই মেলায় গিয়ে দেখা যায় কেউ বই দেখছেন, কেউ পড়ছেন এবং কেউ কিনছেন নিজের পছন্দের বইটি।
ফেনীতে এবার অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বইবিক্রেতাদের অনাগ্রহে বইমেলা আয়োজন করা যায়নি।
ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরোজ বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর জনপদের সন্তানরা অসামান্য অবদান রেখেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এ জেলায় নানাধরনের মেলা বসলেও বইমেলার আয়োজন হয় না। তবে এবার দীর্ঘসময় পর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে এই মেলার আয়োজন আমাদের মতো পাঠকদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির।
বই কিনতে এসেছিলেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোস্তাফা। তিনি বলেন, বই পড়তে আমার ভালো লাগে, কারণ বই মানুষের জ্ঞান ও চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে। নতুন অনেক কিছু জানার সুযোগ পাওয়া যায় বইয়ের মাধ্যমে। আমি বিশ্বাস করি, যার মধ্যে বই পড়ার নেশা একবার জন্ম নেয়, তাকে আর অন্য কোনো ক্ষতিকর নেশা স্পর্শ করতে পারে না। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ কিছু বই কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, আমি মূলত কবিতার বই পড়তে বেশি পছন্দ করি, তাই এবারও কয়েকটি কবিতার বই সংগ্রহ করেছি।
বই মেলায় কথা হয় মারুফা আক্তার নামে স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষকের সাথে। তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে পরিচয় আমার সে ছোটোবেলা থেকে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস শুরু হয়। বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে যার কারণে আজকের এই বই মেলায় আসা। তিনি বলেন, একটা লাইব্রেরিতে গেলে বই সাজানো না থাকলে আমরা সে বই সংগ্রহ করতে পারিনা তবে বইমেলায় সকল ধরনের বই একসাথে পাওয়া যায়।
অয়ন দাস নামের আরেক বইপ্রেমী বলেন, বই পড়া আমার শখ। তাই আজ বইমেলায় এসেছি। প্রিয় লেখকদের নানা বই ঘুরে ঘুরে দেখছি। আমি তরুণদের বলবো মোবাইলে আসক্ত না হয়ে নিত্যনতুন কিছু জানতে ও শিখতে বই পড়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভ্রাম্যমাণ এই বইমেলায় দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা লেখকদের প্রায় ১০ হাজার বই স্থান পেয়েছে। এতে রয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, জীবনীগ্রন্থ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক কাহিনি, রূপকথা, অনুবাদ সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞান, রান্না ও ব্যায়ামবিষয়ক বই, কম্পিউটার এবং ভাষা শেখার বইসহ নানা ধরনের সাহিত্যকর্ম। পাঁচ দিনব্যাপী এই বইমেলা ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে ১৯ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। মেলা উপলক্ষ্যে রোববার (১৮ মে) বিকেলে চিত্রাংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলার বিক্রয় কর্মকর্তা আবুল কাশেম বাবুল বলেন, বইপড়াকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনা বিভাগের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ এই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ এই বইমেলায় দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা লেখকদের প্রায় ১০ হাজারের অধিক বই স্থান পেয়েছে। তিনি জানান, মেলা উপলক্ষ্যে আজ চিত্রাংকন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে ও গতকাল পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে মেলায় সমাপ্তি হবে।