দৈনিক ফেনী: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী ?
মঞ্জু: নির্বাচনকেন্দ্রিক নিজেকে কখনো সেভাবে ভাবি না। আমি মূলত কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের কাজটাই করি। নির্বাচনী ধারায় পরিবর্তন অবশ্যই চাই। তবে এটি সহসা সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত বিএনপির একটি প্রভাব রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। এ প্রভাবের কারণে আমরা নতুন ধারা প্রতিষ্ঠার চিন্তা করছি। কিন্তু তারা এখনও পুরনো ধারায় আটকে আছে। অন্তত ১০০টি আসনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে করে মেধাবী রাজনীতিবিদদের জাতীয় সংসদে আনা যাবে। এতে দেশ উপকৃত হবে।
দৈনিক ফেনী: এক-এগারোতেও বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার হয়েছে। এরপরেও গত ১৬ বছর নির্বাচনহীনতাসহ বেশ কিছু বড় অনিয়ম এখন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সংস্কার কী ব্যর্থ হয়েছে?
মঞ্জু: দুটি কারণে সংস্কার ব্যর্থ হতে পারে। প্রথমত, যদি দৃশ্যমান পরিবর্তন না দেখানো যায়, মানুষ বেশিদিন সংস্কারের কথা বিশ্বাস করবে না। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে বারবার বলেছি, রাস্তায় দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখাতে হবে। ফিল্ড লেভেলের মানুষ সেবা না পেলে, তাদের কাছে সংস্কারের গুরুত্ব হারায়। জনগণ যখন সরাসরি সুবিধা পাবে, তখনই তারা বুঝবে যে সত্যিকারের সংস্কার হয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের নেওয়া দৃশ্যমান উন্নয়নের পলিসি মানুষ দেখতে পেত। কিন্তু ফিল্ড লেভেলের মানুষ যখন সুবিধা পায়নি, বরং নিজ এলাকায় ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য বা ক্যাম্পাসে তাদের নির্যাতন দেখেছে, তখন সংস্কারের ও উন্নয়নের গুরুত্ব তাদের কাছে আর থাকেনি। দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তায় ট্রাফিক সমস্যা সমাধান, দুর্নীতি বন্ধ এগুলো নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণ বুঝবে সংস্কার সফল হয়েছে।
দৈনিক ফেনী: নির্বাচন কখন হতে পারে ?
মঞ্জু: আমরা প্রথম থেকেই নির্বাচন প্রসঙ্গে খুব স্পষ্ট ছিলাম। তবে বিএনপি বারবার বলেছে ‘যৌক্তিক সময়’। আমরা সেই যৌক্তিক সময়ের ব্যাখ্যাও দিয়েছি। প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা এবং পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা গেলে, তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন ও পুলিশ স্থিতিশীল অবস্থায় নেই। এটি স্থিতিশীল করতে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রোডম্যাপের আওতায় ১০-১২টি সংস্কার কমিশন আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে একটি প্রস্তাবনা দেবে। সেই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে আরও কিছু সময় লাগবে। আমরা মনে করি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে বড়জোর ১ থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। এরপর ৩-৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যাবে। বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা যে সংকেত পাচ্ছি, তা হলো তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে চায়। কারণ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বাড়ার আশঙ্কা থাকে। স্থানীয় নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক দলগুলো সেসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
দৈনিক ফেনী: জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এবি পার্টির পরিকল্পনা কী?
মঞ্জু: এবি পার্টি সরকারে যাবে না। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে। তারা রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাচ্ছে। আমরা তাদের সাথে জোট করতে পারি। তবে এবি পার্টি নতুন দল, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে কিনা এখনো নিশ্চিত নই। এ মুহূর্তে ১৮০ আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে। আমাদের ইচ্ছে প্রথমবার বিরোধী দলে থাকা।
দৈনিক ফেনী: এবি পার্টির আহ্বায়ক কেন পদত্যাগ করেছেন?
মঞ্জু: আমাদের সাবেক আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী দলের সাথে কথা বলেই পদত্যাগ করেছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোতে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে এই সরকারে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কিছু কথা রয়েছে। তাই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি এ মুহূর্তে দলের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। সামনে আমাদের চেয়ারম্যান নির্বাচন। সেখানে তিনি অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।