ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়নের দুলা মিয়া মজুমদার বাড়ির মেয়ে মাইমুনা আক্তার লিজা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন দূরের এক শহরে নিজের প্রতিভা দেখানোর। ২০০৩ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে দুবাইয়ে পা রাখার পর সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে।
প্রবাসী জীবন ও ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া সহজ ছিল না মাইমুনার। কিন্তু মাইমুনার দৃঢ় সংকল্প ও অধ্যবসায় তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিক্ষা জীবনে এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে প্রাথমিকভাবে তিনি রিয়েল এস্টেট খাতে কাজ শুরু করেন। তবে দুবাই শহরের প্রযুক্তি খাতের তীব্র বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী পরিবেশ তাকে নতুন সম্ভাবনার দিকে আকৃষ্ট করে। বর্তমানে তিনি গালফ আইটি নেটওয়ার্ক ডিস্ট্রিবিউশন-এ দায়িত্ব পালন করছেন।
দৈনিক ফেনীকে দুবাই থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাইমুনা আক্তার বলেন, নতুন শিল্পে প্রবেশ করতে হলে কৌতূহল, স্থিতিশীলতা ও শেখার আগ্রহ সবচেয়ে জরুরি। সাইবার নিরাপত্তায় প্রবেশ করতে সবসময় প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন হয় না; বিক্রয় বা ব্যবসা উন্নয়নের মতো জায়গায় ব্যবসায়িক দক্ষতাই মূল।
তিনি জানান, ক্যারিয়ার পরিবর্তনে নেটওয়ার্কিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার নিজের অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। ক্লায়েন্ট সংযোগের মাধ্যমে খাত পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তাই তিনি পেশাজীবীদের ইন্ডাস্ট্রি ইভেন্টে অংশ নেওয়া, নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং মেন্টরশিপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
নারী হিসেবে পুরুষ-প্রধান খাতে কাজ করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় অপরিহার্য। কঠোর পরিশ্রম, জ্ঞান ও কৌশলগত চিন্তার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়।
শিশু ও কিশোরদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, অভিভাবকরা যদি নিজেরাই সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না হন তবে, সন্তানদের কীভাবে শিক্ষা দেবেন? নজরদারি ছাড়া অল্প বয়সে ফোন হাতে দিলে তারা সহজেই অনলাইন প্রতারণা বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের শিকার হতে পারে। সচেতনতা, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং খোলামেলা আলাপের মাধ্যমে তাদের নিরাপদ রাখা সম্ভব।
অনলাইন প্রতারণা থেকে সুরক্ষা বিষয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক না করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও দুই-স্তরের অথেন্টিকেশন ব্যবহার, সফটওয়্যার আপডেট রাখা এবং স্ক্যামারের কথার ফাঁদ বুঝতে পারাটাই মূল প্রতিরোধ।
ব্যবসা পটভূমি থেকে যারা সাইবার নিরাপত্তায় আসতে চান তাদের জন্য মাইমুনা বলেন, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, টিমওয়ার্ক ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট জরুরি। পাশাপাশি নেটওয়ার্ক, ডাটা প্রটেকশন ও এনক্রিপশন বিষয়ে টেকনিক্যাল দক্ষতাও প্রয়োজন। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিখাতে নিজেকে আপডেট রাখতে তিনি নিয়মিত অনলাইন কোর্স, গবেষণা, আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তি ব্লগ অনুসরণ করেন বলে জানান তিনি।
দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজের সময়, দক্ষতা ও সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, সাইবার ঝুঁকিও তত বাড়ছে। দুবাইকে বলা হয় ল্যান্ড অব অপারচুনিটি। দক্ষতা থাকলেই এখানে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব এ উপলব্ধিই আমাকে সাইবার নিরাপত্তায় ক্যারিয়ার গড়তে অনুপ্রাণিত করেছে।
উল্লেখ্য, ফুলগাজীর দরবারপুরের সন্তান মাইমুনা আক্তার সম্প্রতি Gulf IT Network Distribution Leadership Excellence Award 2025 অর্জন করেছেন।