গত বছর আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর ২৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কারকাজের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তর হতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তের আওতায় ফুলগাজী উপজেলায় ৬৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারে বরাদ্দ আবেদন করা হলেও মাত্র ৯টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ এসেছে।
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে যেমন বৈষম্য করা হয়েছে তেমনি উপজেলার ৯ টি বরাদ্দের মধ্যে ৭ টিই হলো ফুলগাজী সদর ইউনিয়নে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অন্য দ’ুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি মুন্সীরহাট ইউনিয়নের করইয়া কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অপরটি হলো দরবারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নে ১৭ টি, মুন্সীরহাট ইউনিয়নে ১২টি, দরবারপুর ইউনিয়নে ৯টি, আনন্দপুর ইউনিয়ন ৯টি, আমজাদহাট ইউনিয়নে ১২টি এবং জিএমহাট ইউনিয়নে ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ছয় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে বরাদ্দ মঞ্জুরীকৃত তালিকায় দেখা যায়, ফুলগাজীর ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৪ টাকা। তন্মধ্যে ৮১ শিক্ষার্থীর পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩১৭ টাকা, কিসমত ঘনিয়ামোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৮ টাকা, মনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ টাকা, গোসাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ টাকা, নিলক্ষী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৮২ টাকা, গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৩ টাকা, নিলক্ষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৪ লাখ ৬৯ লাখ ৯৪৩ টাকা, পশ্চিম বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩০৫ টাকা এবং করইয়া কালিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ফেনীর অন্যান্য উপজেলার মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ৭টি, ছাগলনাইয়ায় ৬৫টি, দাগনভুঞায় ১৬টি, সোনাগাজী ১০১টি এবং ফেনী সদরে ৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টার আশ্বাসেও বরাদ্দ মেলেনি
প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক জানান, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুরে নদী ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করেন সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সেসময় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের আশ্বাস দিলেও জগতপুরে ক্ষতিগ্রস্ত দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন বরাদ্দ আসেনি।
১৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে বরাদ্দের আশ্বাস দেন। কিন্ত এই বিদ্যালয়েও কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্দ না পাওয়া প্রসঙ্গে ফুলগাজী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুধাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, মাসাধিক আগে আমি যোগদান করেছি। প্রকৌশলী দপ্তরে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলা থেকে ৬৭ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের জন্য বিবেচনা করা হবে।