৭ বছর পর ব্যয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহুতল (৬ তলা) ভবনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শেষ হয়। গত চার মাসে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্ভব হয়নি ফলে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনটি চিকিৎসায় কাজে লাগছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম কিবরিয়া টিপু জানান, নির্মাণের চার মাস শেষ হলেও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন না করায় উদ্বোধন করা যাচ্ছে না দৃষ্টিনন্দন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনটি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, নবনির্মিত ভবনের অবকাঠামোগত সকল কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চৌহদ্দিতে স্থাপিত বিদ্যুৎ সঞ্চালিত সাব-স্টেশনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস ডালি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সমন্বয় করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় উদ্বোধনে বিলম্ব হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফুলগাজী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবনিযুক্ত ডিজিএম মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনো অবগত নই। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি জানা যাবে।
এ প্রসঙ্গে এমএস ডালি কনস্ট্রাকশন লিঃমিঃ এর সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) সাইফুল ইসলাম বলেন, সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য ঢাকায় লাইসেন্সিং বোর্ড কর্তৃপক্ষের নিকট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার একটি আবেদন দেয়া হয়েছে। এই লাইসেন্স পেলে সংযোগ স্থাপন একমাসের মধ্যে হতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের লিফটসহ অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। লাইসেন্সের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শেষে ভবন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাটে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের পাশে স্থাপিত ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু করা হয়। এর দুই যুগ পরে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৭ সালে হাসপাতালের কলেবর বৃদ্ধিতে ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যার নতুন একটি ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি নির্মাণের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস ডালি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২০১৯ সালে তা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৭ বছর পরে কাজ শেষ হলেও নানা জটিলতার কারণে উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগে জনবল না থাকায় উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদে জরুরি লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবসময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের সেবা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও বাকিদের হিমশিম খেতে হয়।
আবদুল কাদের নামে আগত এক রোগী জানান, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।