ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় ভয়াবহ বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলেও কমছে না মানুষের দুর্ভোগ। টানা তিন দিন পানিবন্দি থাকার পর মানুষ ঘরে ফিরলেও স্বস্তির বদলে মিলছে চরম দুশ্চিন্তা। ভাঙা ঘর, নষ্ট আসবাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব—সব মিলিয়ে শুরু হয়েছে বন্যা-পরবর্তী সংকটের নতুন অধ্যায়।
ভাঙা ঘরে ফিরেও স্বস্তি নেই
দঃ শ্রীপুরের বাবলু জানান, “ঘরে ফিরেও ভালো নেই। পানি উঠে সবকিছুই নষ্ট করেছে।”
বসন্তপুরের কৃষক আমির হোসেন বলেন, “হানির নিচে বেগ্গিন গেছে। ঘরে যাইতাম কেন্নে, হেঁকের ভিত্তে হুইতবার জায়গাও নাই।”
আশ্রয় কেন্দ্র থেকে সহস্রাধিক মানুষ ফিরলেও অধিকাংশের ঘরে নেই রান্নার উপযোগী চুলা, শুকনো বিছানা কিংবা বিশুদ্ধ পানি।
স্বাস্থ্য ও খাদ্যে বিপদ বাড়ছে
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া জানান, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও ল্যাট্রিন সংকটে ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। “সচেতনতাই এখন একমাত্র ভরসা,” বলেন তিনি।
অন্যদিকে, কর্মহীন হয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন কিছু সহায়তা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলছেন বন্যার্তরা।
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বেড়েছে
পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে। আলী আজম স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, “বন্যার সময় লেখাপড়া করিনি, এখনো মন বসে না”।
কৃষি খাতে ধস, সামনে নতুন বিপদ
ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ মাঠের ধান ও সবজির খেত পানিতে পঁচে গেছে। দরবারপুরের কৃষক আবদুল মালেক বলেন, “সব নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে, অথচ হাতে কিছুই নেই”।
গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির বড় ক্ষতি
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারেক মাহমুদ জানান, বন্যায় ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
বিশেষভাবে, মুন্সীরহাট ইউনিয়নের কমুয়া চানপুর গ্রামের রাসেলের একটি ষাঁড় এবং উত্তর দৌলতপুর এলাকার জসিম উদ্দিনের একটি গাভী মারা গেছে।
তিনি জানান, বন্যায় কবলিত গবাদিপশু (গরু ও ছাগল) প্রায় ৪৮০টি, ৩১,৭০০টি হাঁস-মুরগি মারা গেছে, পশুখাদ্য ও ঘাসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৫ টন। সবমিলে, মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ টাকা
এছাড়া বিজয়পুরের “বিসমিল্লাহ পোল্ট্রি” খামারে মারা গেছে ১,৫০০ মুরগি। খামারের মালিক হাসান জানান, “সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে”।
মৎস্য খাতে বিপর্যয়: ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, উপজেলায় ১ হাজার ৩০৫টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ২৭৮ হেক্টর। এতে আনুমানিক ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
সড়ক যোগাযোগে ক্ষতি
উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ বলেন, “ফুলগাজী সদর ও মুন্সীরহাট এলাকায় সড়কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত চিত্র পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।”
