ফুলগাজীর নতুন মুন্সীরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জায়গা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় আপিল নিষ্পত্তির আগেই দখলের অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন মুন্সীরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সামনে এক একর জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে একাধিক মামলার পর ২০১৭ সালের দেওয়ানী-৫৪ নং মোকদ্দমায় বাদীপক্ষের অনুকূলে ২০২৫ সালে রায় হয়। তবে সরকারি পক্ষ (পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র) ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। বর্তমানে জেলা জজ আদালতে (দেওয়ানী আপিল মামলা নং-৭২/২০২৫) এটি বিচারাধীন রয়েছে।

মামলার নথি অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে জমিটি সরকারের অনুকূলে আসে। পরবর্তীতে সরকার বাউন্ডারি ওয়ালসহ দুটি ভবন নির্মাণ করে। কিন্তু রহিম উল্লাহ চৌধুরী ও তার উত্তরসূরিরা জমিটি পূর্ব পুরুষদের দাবি করে মামলা করেন।

এদিকে গত বুধবার (১ অক্টোবর) এ মামলার বাদী রহিম উল্লাহ চৌধুরী ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রদত্ত রায়ের ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পাশে প্রায় ৭ শতাংশ জমিতে প্লাস্টিকের নেট দিয়ে বেড়া নির্মাণ শুরু করেন। মামলাটি এখনো আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় এ ঘটনা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

নতুন মুন্সীরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) এ্যানি বিশ্বাস বলেন, দুর্গাপূজার ছুটিতে গত মঙ্গলবার বাড়িতে যাই। রহিম উল্লাহ চৌধুরী বুধবার সকালে এ জায়গায় প্লাস্টিকের নেটের মাধ্যমে বেড়া দেয়। এ জায়গা পূর্বেও রহিম চৌধুরীর দখলে ছিল এবং সবজি রোপণ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে এ্যানি বিশ্বাস বলেন, আমি ৮ বছর চাকরি করি, সবজি চাষ আমি করেছি। তার দখলে থাকলে মামলা হবে কেন? ৫-৬ বছর আগে এ রহিম চৌধুরী একবার বালু এনে দখলের চেষ্টা করলেও পারেননি। বর্তমানে এ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি। আপিল নিষ্পত্তির আগেই বাদী বেআইনিভাবে বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করতে চাচ্ছেন। সরকারি জায়গা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রহিম উল্লাহ চৌধুরীকে মুঠোফোনে বেড়া অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের দানকৃত ২৫৬৪ নং রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে এক একর জমি পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অনুকূলে আসে। এর মধ্যে ৭৬ শতক জায়গার খাজনা দেওয়া হলেও বাকি ২৪ শতক আজমেরী বেগম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় মামলা চলমান রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাদী রহিম উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৩ সালে জায়গাটি আমি ক্রয় করি। পরবর্তী সময়ে এ জায়গা শ্বশুরের জিম্মায় রেখে বিদেশে চলে যাই। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে দেখি পরিবার পরিকল্পনা অফিস তাদের নামে খতিয়ান করেছে। পরে মামলা করেছি। আদালত ২০২৫ সালে আমার পক্ষে রায় দেন।

বেড়া দেওয়ার বৈধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ে উল্লেখ আছে জায়গা আমার দখলে। তাই নতুন করে আবার বুঝে নেওয়ার দরকার নেই। আগে সবজি চাষ করেছি, এবার বেড়া দিয়েছি। সামনের তিনটি দোকানও আমার দখলে, ভাড়াও দিয়েছি।

আপিলের নোটিশ হাতে পাননি দাবি করে রহিম উল্লাহ বলেন, শুনেছি আপিল হয়েছে। আমার কাছে সিএস, এমআর খতিয়ান আছে। এসব আদালতে জবাব দেব।

ফুলগাজী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জায়গায় বেড়া দেওয়ার খবর পেয়েছি। তবে লিখিত অভিযোগ পাইনি। আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ বৈধভাবে জায়গা দখল করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাশিয়াত আকতার বলেন, যেহেতু মামলাটি আপিল অবস্থায় রয়েছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারও পক্ষে জায়গা দখল বৈধ নয়। বাদীকে বেড়া অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।