সাইনবোর্ড স্থাপন করে লেখা ‘নদী ও নদীর তীরবর্তী স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবুও ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফুলগাজী বাজারের পুরাতন রোডের সড়ক ব্রিজ সংলগ্ন একটি খালি জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যার দুর্গন্ধে চরম বিপাকে পড়ছেন পথচারীসহ এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই স্থানে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে,‘নদী ও নদীর তীরবর্তী স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনী। নামে সাইন বোর্ড থাকলেও, কাজে উল্টো চিত্র দেখা গেল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিতভাবে সেখানে ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। প্রতিদিন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ স্থানীয় লোকজনকে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এলাকার সচেতন মহল বলছেন, আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। তারা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মোহাম্মদ সুজন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে অবাধে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এর ফলে চারপাশে দুর্গন্ধে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ ময়লার ভাগাড় বেড়েই চলছে এবং এলাকায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল আমিন বলেন, এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাইনবোর্ডে স্পষ্টভাবে লেখা আছে—নদী ও নদীর তীরে ময়লা ফেলা নিষেধ। তারপরও কে বা কারা প্রতিদিন এখানে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। এতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, আর পথচারীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। 

এ বিষয়ে ফুলগাজী বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী কোনো পৌরসভা নয়। তাই অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ময়লা ফেলার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। ফলে নদী দূষিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সচিবের সহযোগিতায় প্রায় ৪ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, সেখানে ময়লা ফেলার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে উঠলে এ সমস্যার সমাধান হবে। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল পাইনি।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম বলেন, যেহেতু এটি পৌরসভা নয়, তাই এখানে কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। তবে সরকারিভাবে একটি জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হলে ময়লা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং কেউ নিয়ম অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও সহজ হবে।

উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ভূমি মাশিয়াত আকতার বলেন, এ স্থানে ময়লা না ফেলার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাইকিং, সাইনবোর্ড দেয়া হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় নদীকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে পলিথিন ও ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য বলা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় নি। ডাম্পিং স্টেশনের ব্যবস্থা করে এ সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ফেনী জেলা উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সংযুক্তা দাশ গুপ্তা বলেন, পৌরসভা বা বাজারে যত্রতত্র ময়লা–আবর্জনা না ফেলতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টিতে ময়লা না ফেলতে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়। ময়লা আবর্জনার কারণে নদী দূষণ হয়, এক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।