ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া) আসনের সমন্বয়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু বলেছেন, বিএনপি সরকারে থাকাকালে সাংবাদিকদের উপর কোন নির্যাতন হয়নি ভবিষ্যতেও বিএনপি ক্ষমতায় এলে এমন কিছু ঘটবে না।
গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ফুলগাজীর পুরাতন মুন্সীরহাট রেলস্টেশন চত্বরে আনন্দপুর, জিএমহাট ও বশিকপুর এলাকায় দিনব্যাপী গণসংযোগ শেষে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মজনু বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেননি। প্রথম আলোর সাংবাদিক টিপুর হাত-পা ভেঙে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। এখন সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরতে পারছেন, এটা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত। রফিকুল আলম মজনু আরও বলেন, "জামায়াতে ইসলামী এখন ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। তারা ধর্মের নামে প্রতারণা করছে, অথচ ইসলামের চেতনা ধ্বংস করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম-এই ধর্মকে যারা ক্ষমতার সিঁড়ি বানায়, তারা ইসলাম ও জাতির শত্রু। তিনি বলেন, ধর্মের ব্যবসায়ীদের জনগণের পাশে কখনো দেখা যায় না। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করে। বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের রাজনীতি করে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মজনু বলেন, তখন জনগণের ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান, মেম্বার নির্বাচন করেছে সরকার। বিএনপিকে ভোটে অংশ নিতেও দেওয়া হয়নি। এক ঘণ্টায় ছয়-সাতশ' ভোট পড়েছে এটা কীভাবে সম্ভব, জানতে চাইলে সে সময়কার জেলা প্রশাসক স্বীকার করেছিলেন সরকারের বাধ্যতার কথা।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় ক্যাডারে পরিণত করে নির্বাচনের রায় নিজেদের পক্ষে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এজন্যই তারা জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে নির্যাতন চালিয়েছে।
গণসংযোগ চলাকালে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মজনু বলেন, আমরা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের রাজনীতি করছি। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। যারা ধর্মকে ঢাল বানিয়ে প্রতারণা করছে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
দিনব্যাপী গণসংযোগ উপলক্ষ্যে মোটরসাইকেলের শোভাযাত্রায় উপজেলার শান্তিরহাট, মান্দারপুর, গাবতলা, জগতপুর ও আমজাদহাট সহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিকেলে মুন্সীরহাট বাজারে সমাপ্ত হয় এ কর্মসূচি। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী এতে অংশ নেন
বিএনপি জোট সরকারে সাংবাদিক নিপীড়ন ঘটেছে
বিএনপি জোট সরকারের সময় ফেনীসহ সারাদেশে সাংবাদিক নিপীড়ন, হত্যা এবং মামলায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। মুক্ত গণমাধ্যম তখনও অধরা ছিল, এখনও তা বিরাজমান।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র বলেছে, ২০০৬ সালে নির্ধারিত সময়ে সাংবাদিকরা হামলা, হুমকি, গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন। ২০০২ হতে ২০০৬ সালের মধ্যে ৪ জন সাংবাদিক নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৮০ জন আইন প্রয়োগকারী বাহিনী দ্বারা হুমকির শিকার হয়েছেন। তথ্য সূত্রে দেখা গেছে, ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনায় প্রেসক্লাবের কাছে বোমা মেরে হত্যা করা হয় মানিক সাহা নামে একজন প্রবীন সাংবাদিককে। সে বছর ২২ অগাস্ট কামাল হোসেন নামে এক সংবাদকর্মীকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ পর বাসার কাছ থেকে মৃত পাওয়া যায়। একই বছর ২৭ জুন খুলনায় চাঞ্চল্যকর হুমায়ুন কবির বালু হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
পরের বছর অর্থাৎ ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন খুলনা প্রেসক্লাব এলাকায় বোমা হামলায় নিহত হন। এছাড়া ২০০২ সালের ৯ এপ্রিল সাতক্ষিরার তালা এলাকায় সাংবাদিক এমএ ফয়সলকে পিটিয়ে হাত, পা ভেঙে ও মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। পরের বছর ১৯ জুন শরিয়তপুরে আবুল বশর নামে এক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গুলি করে গুরুতর জখম করা হয়। ২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন ২০ জন সাংবাদিককে লাঠি, রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর করে আহত করে পুলিশ।
বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালে ফেনীতেও ঘটেছে সাংবাদিক নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনা। প্রবীন সাংবাদিক ওছমান হারুন মাহমুদসহ একাধিক সাংবাদিক সংবাদের কারণে মামলার শিকার হয়েছেন।