পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে ও ভূতুড়ে পরিবেশে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও নার্সরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাত নামলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চারদিক ঢাকা থাকে অন্ধকারে। চারপাশে জঙ্গল, রয়েছে সাপ-বিচ্ছুর ভয়। এতে চরম আতঙ্কে থাকা কর্মরতরা জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তর এবং আবাসিক এলাকায় রাত নামলেই নেমে আসে অস্বস্তিকর নীরবতা। ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও আলো নেই, চারপাশ জঙ্গলে ভরা। সাপ-বিচ্ছু, পোকামাকড়ের উৎপাত নিত্যসঙ্গী। সবচেয়ে বড় সমস্যা সরকারি নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা নেই। এছাড়া রোগীর ওয়ার্ডেও রয়েছে চোরের উপদ্রব।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে হাসপাতালের গভীর নলকূপের মোটর চুরি হয়। পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় চোর শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেবিকা খালেদা আক্তার, রূপসা জাহান, তানজিলা ইয়াসমিন, সেবক রুবেল হোসেন, মাইনুল হোসেনসহ অনেকেই জানান, রাত গভীর হলে হাসপাতালের ভেতর ও আবাসিক এলাকায় এমন পরিস্থিতি হয় যে আমরা সম্পূর্ণ অসহায় বোধ করি। বাইরে বের হতে ভয় লাগে। সঞ্চিতা রাণী পোদ্দার, চিনু রাণী দে, হাবিবা খাতুন, দিলরুবা ইয়াসমিন, শিমু মহন্ত, আফরোজা খাতুন, নিপা খাতুন, সুবর্ণা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য কর্মীরাও একই অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, গভীর নলকূপের মোটর চুরি হওয়ায় আবাসিক এলাকায় খাবার পানির তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানান আবাসিক এলাকায় বসবাসরত অনেকেই।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পূর্বে এক রোগীর মোবাইল চুরি হয়েছিল। পরে জানা যায়, বহিষ্কৃত এক রাজনৈতিক কর্মীর সংশ্লিষ্টতা ছিল। পরে মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন,ঘটনার বিষয়ে থানাকে অবহিত করা হবে। সরকারি নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে না থাকায় দুর্ভোগ বাড়ছে। নিরাপত্তায় আনসার নিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল।
জানা গেছে, পূর্বে উপজেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা আনসার প্রদানের আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখে নি।এলাকাবাসীরা জানান, নতুন ৬ তলা ভবন নির্মাণকালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল্যবান সামগ্রী রক্ষায় পাহারাদার ছিল। তখন চুরি বা নৈরাজ্যের ঘটনা ছিলই না। অথচ নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু করার কিছুদিন পর থেকেই চুরি, অরাজকতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, রোগীর চিকিৎসা দিতে দিতে হাসপাতাল নিজেই যেন ভয়াবহ অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে গেছে। দ্রুত সিসিটিভি স্থাপন, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ এবং প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
