জুম'আ মানে সম্মিলিত হওয়া। জুমার নামাজের বিশেষ গুরুত্ব বোঝাতে এদিনটি ইসলামধর্মে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। মুসলমানদের 'সাপ্তাহিক ঈদ' হিসেবে এই দিনের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। বিশেষ ইবাদত ছাড়াও এই জুমআ'র (শুক্রবার) দিনের রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সুরা জুম'আ নামে কুরআন শরিফে একটি সুরাও অবতীর্ণ হয়েছে।
রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন (ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।

জুমার দিন ইতিহাসে যা কিছু ঘটেছিলো:
জুমার দিনের গুরুত্ব শরিয়তে অনেক বেশি। এদিন ইতিহাসে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্ম হয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে সপ্তাহের এই দিন ছুটি থাকে। কোরআন-হাদিসে জুমার দিনের আমল সম্পর্কে নানা বর্ণনা রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এদিন যা কিছু ঘটেছিল এবং ঘটবে তার অনেক বর্ণনা রয়েছে।

এক হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪)
১০ মহররম ৬১ হিজরি (১০ অক্টোবর ৬৮০ সাল) শুক্রবার ঐতিহাসিক কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে , কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৪০০)
জুমার দিনের বিশেষ আমল :
রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)।
এমনিতেই তিরমিজি শরিফের হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন। সুতরাং আমাদের জুমার দিন অন্যান্য আমলের সাথে সাথে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে।
জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে একটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে জুমার দিনে ‘সুরা কাহফ’ তেলাওয়াত করা। পবিত্র কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারে তবে সে যেন এ সুরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে।
জুমার দিনে ‘সূরা কাহাফ’ তেলাওয়াতের ফজিলত:
যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমা থেকে।আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)।
যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম) (মিশকাত)।

বাংলাদেশে শুক্রবারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
সাধারণত বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে জুমারদিনকে বিয়ে বা যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য মনে করা হয়। সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, শালিস, বৈঠক, গুরুত্বপূর্ণ সভাও শুক্রবারেই বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মসজিদ গুলোতে জুমার দিন থাকে মিলাদের আয়োজন। সাধারণত মনোবাসনা পূর্ণ, শুভকাজের শুরু, দোয়া কামনা, রোগ মুক্তি, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাশ, বিদেশ গমণ, মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়ার আয়োজন সহ বিভিন্ন কারনে এসব মিলাদের আয়োজন করা হয়। খতিব সাহেব নামাজের পরে মুসল্লিদের নিয়ে বিভিন্ন দোয়া দরুদ, শের (এক ধরনের কবিতা) পড়ে মোনাজাত করেন। এরপর মিলাদ আয়োজনকারীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের মিষ্টিমুখ (জিলাপী, খেজুর, মিষ্টি, হালুয়া রুটি ইত্যাদি) করানো হয়।

ইতিহাসের প্রথম জুমা:
জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।
জুমার দিন শুধু ধর্মীয় না। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও জুমার নামাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

নিশাদ আদনান
কন্টেন্ট এনালিস্ট, দৈনিক ফেনী