আমেরিকা প্রবাসী মামাদের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে সোনাগাজীতে ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজের পায়ের রগ কাটা, ড্রিল মেশিনে পায়ে ছিদ্র করা, মাথায় আঘাত, পাজরে হাড় ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের রাঘপুর এলাকায় তার মৎস্য প্রকল্প থেকে তুলে নিয়ে তাকে নির্যাতনের অভিযোগ করছে তার পরিবার। আহত দ্বীন মোহাম্মদ ফিরোজ নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের মজলিশপুর ইউনিয়ন শাখার সহ সভাপতি।

ফিরোজের মা সুফিয়া খানম বুলবুলি বলেন, ছোট বেলায় ফিরোজ তার বাবাকে হারানোর পর থেকে নানা বাড়িতে বড় হয়েছে। আমার তিন ভাই আমেরিকা প্রবাসী। জায়গা জমি দেখাশুনাসহ বড় ৫টি পুকুরে আমার ছেলে মৎস্য চাষ করতো। পুকুরগুলো সে ইজারা নিয়ে চাষ করে। স্থানীয় বিএনপি নেতা লিটন ও আওয়ামী লীগ নেতা জহির সম্প্রতি সময়ে আমার ছেলের চাষ করা পুকুরগুলো দখলে নেওয়ার প্রানপণ চেষ্টা করে আসছে। আমার মেঝো ভাই দোলোয়ার হোসেন ছুট্টু মিয়ার কাছ থেকেও তারা মৎস্য প্রকল্পগুলো লিজ নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ফিরোজ প্রকল্পগুলো চাষ করায় তারা সেগুলো নিতে পারছিল না। গত কয়েক দিন মেশিন বসিয়ে পুকুরের পানি সেচ দেওয়া হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফিরোজ ফেনী থেকে এসে মাছ ধরতে প্রকল্পে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লিটন, জহির, মাসুদের নেতৃত্বে ১৫-২০জন আমার ছেলেকে ধরে মারধর করে। আমি, আমার বোন মোমেনা খানম এবং আমার মেঝো ভাই তাদেরকে বাধা দিলে আমাদেরকেও মারধর করে। এসয়ম লিটন ফোন দিয়ে আরো লোকজন নিয়ে আসে। লিটন কে বলেছি আমার ছেলেকে ছেড়ে দিতে, সে শুরুতে এক লাখ টাকা দাবি করে, না হয় ফিরোজ কে মেরে ফেলে দেবে। আমাদের বাধার কারণে মারধরে সুবিধা করতে না পেয়ে তারা আমার ছেলেকে কুঠিরহাটের দিকে নিয়ে যায়। পরে দুপুরে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাই, তার দুই পায়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে চারটি ফুটো করে লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়, মাথায় আঘাত করে ও পাজরের হাড় ভেঙে দিয়েছে তারা। তাকে উদ্ধার করে ফেনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল নিলে আইসিইউতে রাখা হয়। গত তিন দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। ফিরোজ এখনও মৃত্যুশয্যায় রয়েছে। ডাক্তাররা কোন আশাভরসা দিতে পারছেন না।

স্থানীয়রা জানান, ফিরোজের নানার বাড়ি চরমজলিশপুর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের মনির উদ্দিন হাজী বাড়ির মৎস প্রকল্পে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ১০/১৫ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান করছিল। ফিরোজ ফেনী থেকে এসে প্রকল্পে ঢুকতেই তাকে ধরে মারধর শুরু হয়। স্বজনদের বাধার মুখে তাকে সেখান থেকে প্রথমে রাঘবপুর বটতলা নিয়ে যায় তারা, এরপর কালি বাড়ির সামনে বটতলায়, সর্বশেষ কুড়ি বাড়ি সড়কের পাশে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে নিয়ে দফাদফায় নির্যাতন করে।

আহত ফিরোজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লিটনের সাথে কয়েক বছর আগ থেকে ফিরোজের মামাদের সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। সম্প্রতি সময়ে লিটনসহ তার সহযোগিতারা ফিরোজের চাষ করা মৎস্য প্রকল্প তাদের আয়ত্তে নিতে চেষ্টা করছে। লিটনের আশ্রয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা জহিরের সাথেও গত বছর মাটি বিক্রি ও মাটি কাটা নিয়ে ঝামেলা হয়। স্থানীয় সালাউদ্দিন মামুনও ফিরোজের উপর হামলায় জড়িত। কারন মামুন বিভিন্ন ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থেকে ঝামেলা সৃষ্টি করে। মামুন ফিরোজের সাথে তার মামাদেরও ঝামেলা বাধিয়ে দেয়। তার প্রেক্ষিতে গত বছর তার মেঝো মামা ফিরোজসহ তার বন্ধু সজিব ও তার ফুফাতো ভাইয়ের নামে থানায় অভিযোগ করে। সবকিছুর মূলে সালাউদ্দিন মামুন জড়িত।

অভিযুক্ত আবুল হোসেন লিটন বলেন, তার মামাদের সাথে আমার দ্বন্ধ থাকলেও ফিরোজের উপর হামলার ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে দেখেছি, তার মা আর খালা আমাকে অনুরোধ করেছিল তাকে ছাড়িয়ে নিতে। টাকা দাবি বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এতগুলো লোকের বিরুদ্ধে আমার একার পক্ষে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিলো না। আমার কাজ থাকায় চলে গিয়েছি। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না।

আরেক অভিযুক্ত সালা উদ্দিন মামুন বলেন, আসতাগফিরুল্লাহ! ফিরোজের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। সকালবেলা আমি তার প্রকল্পে মাছ কিনতে গিয়েছিলাম। মাছ ধরতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি ওখান থেকে চলে আসি। পরে সকলের মতো আমিও শুনেছি তাকে মারা হয়েছে।

অভিযুক্ত জহির বলেন, আমি তার পুকুরে পাম্প মেশিন বসিয়েছিলাম। গত তিন ধরে পুকুর সেচের কাজে আমি নিয়োজিত ছিলাম। মাছ ধরার সময় আমি দোকানে গিয়েছিলাম চা খেতে এরমধ্যে এতকিছু হয়ে গেলো। পরে আমি শুনেছি ফিরোজকে কারা যেন মেরেছে। আমি বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মিথ্যা।

অভিযুক্ত মাসুদ বলেন, আমি প্রকল্পে গিয়েছিলাম মাছ কিনতে। ওখানে গিয়ে দেখি ফিরোজের মা ও খালা তার মামার সাথে সম্পত্তি ও মাছ ভাগ নিয়ে কথাকাটা কাটি করছে। আমি তাদের সম্পত্তি পারলে বুঝিয়ে দিতে বলেছি। এরমধ্যে ফিরোজ আসলে তার মামার সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। আমি ফিরোজকে বেয়াদবি না করে মামার সাথে মিলেমিশে চলার পরামর্শ দিয়ে কিছুটা দূরে চলে এলে শোরগোলের শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি ফিরোজকে কিছু লোক মারধর করছে। তাদেরকে মারধর করতে নিষেধ করি তবে আমি বিএনপি সমর্থক এবং তারাও বিএনপি সমর্থক হওয়ায় জোর দিয়ে কিছু করতে পারি নি। পরে আমার বদনাম হবে। তবে মুক্তার, সিফাত, সজলসহ আরো অনেকজন মারধর করছিল আমি দেখেছি। এই ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততা নেই।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বায়েজিদ আকন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাই নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপক্ষে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।