ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় শুরু হয়েছে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা চলবে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ বছরের ইলিশ মৌসুম । ইলিশ রক্ষায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে উপকূলে মাছ শিকার ফলে আরও ২৩ দিন জেলেদের কাটবে বেকার সময়।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে নদ-নদী ও সাগরে ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময়। এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ সাগর হতে নদীতে আসে। মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার নিরাপদ সুযোগ করে দিতে সরকার প্রতি বছরই এই সময়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে থাকে। এ সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিপণন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, সোনাগাজীতে নিবন্ধিত দুই হাজারের অধিক জেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে উপকূলীয় জেলের সংখ্যা এক হাজার। তন্মধ্যে কার্ডধারী ইলিশ জেলে রয়েছেন ২৭৫জন। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা সকল জেলের জন্য প্রযোজ্য, তবে এই সময়ে শুধু নিবন্ধিত ইলিশ জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৬ দশমিক ৮৮ মেট্রিকটন চাল প্রণোদনা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র যেসব জেলে ইলিশ জাল ব্যবহার করেন তারা ছাড়া অন্যরা সরকারি সহায়তা পাবেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাগাজী সদর ও চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জলদাসপাড়ার জেলে পল্লীতে নৌকা ও মাছ ধরার সরঞ্জাম ইতোমধ্যেই উপকূলে ফেলে রেখেছেন জেলেরা। নৌকাগুলো নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা রয়েছে।
জেলেরা জানিয়েছেন, বছরে তিনবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময় বিকল্প কাজ খুঁজতে হয় তাদের। একদিকে নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে কষ্টে দিন পার করতে হবে তাদের। সংসারের ব্যয় চালাতে মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ এবং এনজিওর কিস্তি শোধ করাও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় জেলে সুমন জলদাস বলেন, নদী ও সাগরের মোহনা থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেই সংসার চলে। কিন্তু এখন ২২ দিন পুরোপুরি আয়ের পথ বন্ধ। নিবন্ধিত জেলে হয়েও আমি কোনো সহায়তা পাই না, কারণ শুধু ইলিশ জেলের তালিকাভুক্তদের জন্যই প্রণোদনা বরাদ্দ থাকে।
জয়দেব নামের জেলে ইলিশ জাল দিয়ে মাছ ধরেন। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন নদীতে নামতে পারবো না। এই নিষেধাজ্ঞার পর শীত মৌসুম চলে আসবে। শীতে আমরা আর মাছ পাবো না। এরপর থেকে নদী ও সাগরের মোহনায় গেলেও ইলিশ রেণু এবং জাটকাই বেশি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, এ নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই এ বছরের ইলিশ মৌসুম শেষ হয়ে গেল। এখন সরকারের কাছ থেকে যে চাল পাবো তা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পরে যখন মাছের আকাল দেখা দেবে, তখন আমাদের নিত্য ঋণ করেই সংসার চালাতে হবে। আমাদের দাবি থাকবে, জেলে পেশার পাশাপাশি এই জেলে পাড়ায় ভিন্ন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে দেওয়া হোক।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আকতার জানান, নিষেধাজ্ঞার শুরু হওয়ার আগে সচেতনতা তৈরির জন্য আমরা লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা করেছি। এ সময়ে নিয়মিত টহল জোরদার থাকবে।
খাদ্য সহায়তা সকল জেলে পায় না এবং বাকি জেলেরা কি নিষেধাজ্ঞার বাহিরে থাকবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার শুধু নিবন্ধিত ইলিশ জেলেদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। তবে নিষেধাজ্ঞা সবার জন্য। সকলে আইন মেনে চলবেন।