‘বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি দেশ দিয়েছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন, একটি মানচিত্র দিয়েছেন। যার কারণে আজ আমরা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।’ আজ বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে জেলা শিক্ষা অফিসে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার উদ্বোধন শেষে শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী।

সাংসদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন বলে আমরা মন্ত্রী হয়েছি, এমপি হয়েছি, কেউ ডিসি হয়েছেন, কেউ বড় কর্তা হয়েছেন, কেউ ব্যবসায়ী হয়েছেন। তিনি দেশ স্বাধীন না করলে আমাদের কারও এ পর্যায়ের আসার সুযোগ হত না।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা উল্লেখ করে সাংসদ বলেন, এ ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিস্তারিত বলে গিয়েছেন এদেশ স্বাধীন হবে। আগামী দিনের পরিকল্পনা সবকিছু এ ভাষণে তিনি উল্লেখ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

এসময় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা তুলে ধরে নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই এদেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যদি দেশ স্বাধীন না করতেন, আমরা যদি পাকিস্তান থাকতাম, আমরা সবকিছু হতে বঞ্চিত হতাম।

তিনি বলেন, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছর পূর্ণ হবে। যে মানুষটি আমাদের এত কিছু দিয়েছেন তার জন্যও আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে।

এসময় তিনি উপস্থিত শিক্ষকদের প্রতিটি স্কুল, কলেজে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যা করবেন লোক দেখানো নয়, অন্তর থেকে করবেন।

শিক্ষকদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সাংসদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এ দেশ নিরাপদ থাকবে, মানুষ নিরাপদ থাকবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন তা ধরে রাখতে হলে, দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। এটি সকলের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে আমি মনে করি। তাহলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

ফেনীতে শিক্ষকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, শিক্ষার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। এখানে যারা শিক্ষকতা করেন তারা অনেক কষ্ট করে ছাত্রদের আন্তরিকতার সাথে তাদের শিক্ষাদান করার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বলেন, ফেনীর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করলে হবে না। সারাদেশ হতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবীরা ঢাকায় আসে। তাদের সাথে আমাদের গ্রামের সেই স্কুল-কলেজের তুলনা করলে হবে না। এটা সবাইকে মাথা রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সূত্র ধরে নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, আমরা যখন ছাত্র থাকাকালীন শিক্ষকদের আন্তরিকতা, ভালোবাসা এবং কঠোরতা দেখেছি। তারা আমাদের শুধু ভালোবাসতেন না, শাসনও করতেন। আমরা দেখেছি যারা ভালো ছাত্র ছিল, শিক্ষকেরা রাতের বেলা তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখাশুনা করতেন।

সভায় ইমামদের প্রতি সকলকে শ্রদ্ধাশীল হবার আহ্বান জানিয়ে সাংসদ বলেন, সমাজে ইমামদের দায়িত্ব হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত ইমাম সাহেবের বিশাল অবদান আছে। আজকে অনেকে ইমামদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কথা বলে, কটাক্ষ করে। আমার অনুরোধ আপনারা সকলে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।

মতবিনিময়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বিকম, ফেনী পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার। এসময় ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতজন্মবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ সামনে রেখে কর্ণারটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জেলা শিক্ষা অফিস।

ছবিঃ এস আলম সবুজ