ভর্তি হওয়া প্রতিটি রোগীর পাশে দালালের নাম লিখে রাখে চিশতিয়া মা ও শিশু হাসপাতাল। হাসাপাতালে রেজিষ্ট্রারে পর্যবেক্ষণ করে এ চিত্র পেয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। রবিবার (৮ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালটি পরিদর্শন এর অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত খুঁজে পান। এর প্রেক্ষিতে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কস্থ হাসপাতালটি সীলগালা করে দেয় জেলা প্রশাসন। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটির ৩০ হাজার টাকার জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামান। 


অভিযান শেষে মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে প্রতিষ্ঠানের দুই মালিক প্রণব দেবনাথ ও রাশেদুল ইসলাম হাজারী কাউকে পাওয়া যায়নি। লাইসেন্স নবায়ন না করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও অদক্ষ নার্সসহ নীতিমালা না মেনে ক্লিনিক পরিচালনা করছে হাসপাতালটি। প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে তাতে কোন মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষর নেই। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে রেজিস্ট্রার খাতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভর্তি হওয়া প্রতিটি রোগীর পাশে দালালদের নাম ও কমিশনের হিসাব লিখে রাখা হয়েছে। কাগজপত্র না থাকায় টেকনোলজিস্টদের পালিয়ে যাওয়া এবং দৃশ্যমান স্থানে ডাক্তারদের চার্জ ও ফি প্রদর্শন না করার অপরাধে মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরী (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি অস্থায়ীভাবে সিলগালা ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। 


অভিযানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইসতাব রাকিব ও পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলো।


ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ফারহানা আক্তারের ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতেই নিহত প্রসূতির মা জাহানার আক্তার বাদি হয়ে তিনজনকে আসামী করে রাতে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলায় আসামী করা হয়েছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক নাসরিন আক্তার (শিমু), স্টাফ কনক চন্দ্র নাথ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনির হোসেন। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে।


নিহত ফারহানা আক্তার ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর এলাকার জুলহাসের স্ত্রী। সিজারের পর তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। নবজাতকটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।


নিহতের স্বজনরা জানান, শনিবার (৭ মার্চ) দুপুরে স্থানীয় এক দালালের পরামর্শে ফারহানা আক্তার নামে ওই প্রসূতি নারীকে স্বজনরা হাসপাতালটিতে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার দ্রুত সিজার করতে হবে বলে অপারেশন থিয়েটারে নেয়। একপর্যায়ে প্রসুতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির অবস্থা গুরুতর বলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু রোগীকে সেখানে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে।


নিহত ফারহানা জেলার দাগনভুইয়া উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের বেপারী বাড়ীর জুলহাস এর স্ত্রী। তার দুই বছর বয়সী জান্নাতুল ফেরদৌস নিঝুম নামে এক মেয়ে রয়েছে।


ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মধ্যরাতে ফেনী জেনারেল হাসপতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।