‘বাবার জন্য অনেক কেঁদেছি। রাগ করে বাড়ি ছেড়ে ছিলেন তিনি। তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফোনে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু তিনি তার ঠিকানা বলতেন না। সমাজে ভালো মানুষ এখনও আছে বলেই আজ বাবাকে ফিরে পেয়েছি।’ গতকাল শুক্রবার (২০ মার্চ) তার সেই হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে এসে আবেগ আপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন অটোরিক্সা চালক জুয়েল।


গত (১৮ মার্চ) দুপুরে ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের রেজুমিয়া এলাকা থেকে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন ৭০ বছরের বৃদ্ধ ফিরোজ মিয়া। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন পথচারীরা। সেদিন থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার স্থায়ী ঠিকানা ও আত্মীয় স্বজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।


সহায়’র সাধারণ সম্পাদক দুলাল তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার দিন বৃদ্ধের কাছে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। কিন্তু পরিচয় পত্রে তার যে স্থায়ী ঠিকানা লিখা ছিল, সেটি সিলেটের ভাড়া বাসার ঠিকানা। তাই তাকে খুঁজে পেতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে আমি ব্যাপারটি সিলেট পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করি। সব শেষ সিলেটের পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কারণে তার পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।


আহত বৃদ্ধের ছেলে অটোরিক্সা চালক জুয়েল জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের বানিয়াচং থানা পুলিশ জানায় তিনি দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে ফেনীতে রয়েছেন। এ খবর পেয়ে আমি ফেনীতে রওনা হই। বাবার নাম জাকারিয়া আহম্মেদ ফিরোজ। আমরা সিলেটের বানিয়াচং থানার ইকরাম এলাকার বাসিন্দা।


জুয়েল আরও জানান, গত ২১ বছর আগে তাদের মা মারা গেলে তার বাবা তাদের সাথেই থাকতো। কিন্তু গত এক বছর আগে কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেন নি তিনি।


তিনি বলেন, বাবার জন্য অনেক কেঁদেছি। মাঝে মাঝে ফোনে কথা বললেও কোথায় আছে সেই ঠিকানা দিতেন না। বাবার নির্দিষ্ট ফোন না থাকায় আমরা তিন ভাই সব সময় তার সাথে কথা বলতে পারতাম না।

বাবাকে ফিরে পেতে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানায় বৃদ্ধের ছেলে জুয়েল। শুক্রবার বিকালে আহত বৃদ্ধকে সিলেট নেয়ার সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, সিলেটের পুলিশ ও ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।


তিনি বলেন, সমাজে ভালো মানুষ আছে বলেই বাবাকে ফিরে পেয়েছি।

সহায়’র প্রধান সমন্বয়ক মনজিলা আক্তার মিমি জানান, সহায়’র প্রচেষ্টায় কুড়িয়ে পাওয়া ৯টি নবজাতককে লালন পালন করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দত্তক দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ফেনী পৌরসভার সুলতানপুর এলাকার সরকারী কবরস্থানে অজ্ঞাত ১০টি মরদেহের দাফন করা হয়েছে, ৩৭০ অধিক অজ্ঞাত রোগীকে ঔষধ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, ২১৭ জন অজ্ঞাত রোগীকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে, ১০০ জনের অধিক অজ্ঞাত রোগীকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।