ওরা ৪ জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এদের মধ্যে একজন চিত্রশিল্পী, আর বাকীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সারাবিশ্ব যখন কাঁপছে, তখন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সুরক্ষায় ও সংক্রমণ প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে ফেনীর মহিপালের ৪ তরুণ যুবা। তারা হলো, চিত্রশিল্পী ফাহাদ হাসান কাজমী, বার্জার কালার ব্যাংকের জোনাল অফিসার শফিকুল ইসলাম, কালার কনসালট্যান্ট অভিনাশ চাকমা ও কাস্টমার সার্ভিস এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন এসিস্ট্যান্ট ওসমান বিন রশিদ।

মহিপালের ফিশারী রোডের একটি কারখানায় চলছে তাদের সেই কর্মযজ্ঞ। সাথে রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর কাজও। গত কয়েকদিন ধরে ফেনীর মহিপালের জনবহুল এলাকায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ও টমটম চালক ও আশেপাশে অবস্থিত কলোনীতে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষদের কাছে গিয়ে নিজেরাই বিলি করছে সেগুলো। এছাড়া নিজেদের এলাকায় রাস্তায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করেছে তারা।


এ কার্যক্রমের প্রধান উদ্যোক্তা চিত্রশিল্পী ফাহাদ হাসান কাজমী বলেন, করোনা নিয়ে চারপাশের পরিস্থিতি দেখে খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রমিকদের কথা ভেবেই এ উদ্যোগ নেই। কারণ এদের অনেকেরই মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার ক্রয় ক্ষমতা নেই। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে তারাই আগে আক্রান্ত হতে পারেন। কর্মকান্ডে আমার তিন বন্ধুও যোগ দিল।


তিনি বলেন, নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়েই শুরু হল মাস্ক ও হ্যান্ড ওয়াশ তৈরির কাজ। প্রথমে ৩শ মাস্ক তৈরির কাজ শুরু করি। পাশাপাশি আমাদের একটি ফেইসবুক গ্রুপে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা চালাতে থাকি। সেখান হতেও বেশ সাড়া মেলে। আমার প্রতিষ্ঠিত কারখানায় শুরু হয় মাস্ক তৈরি। বাড়তে থাকলো আমাদের পরিকল্পনা। চললো পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম।


কাজমী বলেন, গত ৪দিনে আমরা ৫শটি মাস্ক তৈরি করে বিলি সাধারণ মানুষদের কাছে বিলি করেছি। কলোনী গুলোতে ঘরে ঘরে হ্যান্ড ওয়াশ পৌঁছে দিয়েছি। আরও ৩শটি মাস্ক তৈরির পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ফেনীর বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেগুলো পৌঁছানো হবে।


মাস্ক তৈরির পাশাপাশি সামনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দরিদ্র মানুষের মধ্যে শুকনা খাবারও বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তাদের এ কার্যক্রমে ‍উদ্বুদ্ধ হয়ে সহযোগিতায় করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরাও।


কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, সকলের স্বেচ্ছা শ্রমে এসব মাস্ক বানানো হচ্ছে। বাজার হতে ব্যাগ সংগ্রহ করে কেউ কাপড়ে দাগ দিচ্ছেন, কেউ কাটছেন, আবার কেউ সেলাই করছেন। একসাথে বেশকিছু তৈরি হলে তারা বিতরণের জন্য পাড়ায় মহল্লায় বেরিয়ে পড়ছেন। মাস্ক শেষ হলে আবার কারখানায় ফিরে বানাতে বসছেন।


কার্যক্রমের আরেক উদ্যোক্তা বার্জার কালার ব্যাংকের ফেনী জোনাল অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, শহর ‘লকডাউন’ হয়ে গেলে এসব খেটে খাওয়া মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ থাকবে। সেসময়ে যদি কজন মানুষের এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি, একটু তৃপ্তি পাওয়া যাবে।


তিনি বলেন, দুর্যোগের সময় নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা সবার করা উচিত।


স্থানীয় এলাকাবাসী মোঃ আফসার বলেন, তাদের এ উদ্যোগ অনুকরণীয়। এদের মত সমাজে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এলে দরিদ্র মানুষগুলো ভরসা পাবে।