৫ নভেম্বর, ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে কিছু আমদানিকারক। টেকনাফ ও কক্সবাজারের ১১ জনের একটি সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের নামের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।


এই সিন্ডিকেট চক্র টেকনাফে ৯৫ টাকার কমে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছে না। অথচ আমদানি খরচ ৪২ টাকার বেশি পড়েনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করছে। গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং টিমের সদস্যরা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে পেঁয়াজের আমদানি ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ব্যাপক কারসাজি পেয়েছে। টিমের সদস্যরা জানান, সব খরচ মিলিয়ে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আর খুচরা বাজারে কেজি ৭০ টাকা হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুর ইসলাম বলেন, ‘টেকনাফ ও কক্সবাজারের একটি সিন্ডিকেটের তথ্য পেয়েছি। এই সিন্ডিকেটে ১১ জন ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছে। তারা কেজি ৯৫ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি করছে না। আমরা এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের নামের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। আমদানিকারক, আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আমরা খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কেজি ৬০ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি।’


চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রণীত পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির সিন্ডিকেটের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হচ্ছে: সজিব (আমদানিকারক), মম (আমদানিকারক), ফোরকান (বিক্রেতা), জহির (আমদানিকারক), সাদ্দাম (আমদানিকারক), কাদের (সিএন্ডএফ), শফি (ব্রোকার), গফুর (বিক্রেতা), মিন্টু (বিক্রেতা), খালেক (বিক্রেতা) ও টিপু (বিক্রেতা)।

জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সদস্য সজিব বলেন, ‘আমদানি খরচ কেজি ৮৭/৮৮ টাকা পড়ছে। আমরা ৯০/৯৩ টাকা দরে বিক্রি করছি। প্রচুর পেঁয়াজ পচে গেছে। মিয়ানমার ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। সেখানে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে আমদানিও কম হচ্ছে। আমি কোনো সিন্ডিকেটে জড়িত নই।’ অপর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী টিপু বলেন! আমি সিএন্ডএফ এজেন্ট।’

পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। আড়ত ভর্তি পেঁয়াজ। তারপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। খুচরা বাজারে কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ক্রেতারা। পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখি রোধ করা যাচ্ছে না। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দেখা গেছে মিয়ানমারের পেঁয়াজই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া চায়না, মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও রয়েছে। অভিযানের মধ্যেও গতকাল পাইকারি বাজারে কেজি ৯৫ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে গঠিত টিম গত দুই দিন যাবত খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় ক্রয়-বিক্রয় মূল্যে কারসাজির কারণে কয়েকজন আড়তদারকে অর্থ জরিমানা করেছে তারা। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে দেখতে পায়, মিয়ানমার পেঁয়াজ মূল্য তালিকায় ৬০/৬৫ টাকা লিখে রাখলেও দোকানের হালখাতা পরীক্ষা করে দেখা গেছে কেজি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছে। অছি উদ্দিন ট্রেডার্স মূল্য তালিকায় ৬০-৭০ টাকা লিখলেও সিলেটগামী ট্রাকের চালানে লেখা রয়েছে ১১০ টাকা। গতকাল গ্রামীণ বাণিজ্যালয় নামের প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের আরো কয়েকটি দোকানে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

খাতুনগঞ্জে ৫০ থেকে ৬০ জন পেঁয়াজের আড়তদার ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মধ্যে কোনো আমদানিকারক নেই। সকলেই কমিশন এজেন্ট। ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসায় তারা এখন টেকনাফ থেকে পেঁয়াজ এনে বিক্রি করছে। আড়তদার ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস ইত্তেফাককে বলেন, আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি না। কমিশনে বিক্রি করে থাকি। টেকনাফের আমদানি কারকরা ৯৫/৯৬ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি করছে না। এই দরে পেঁয়াজ কিনে কিভাবে ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি করব। আমরা সমিতির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’

সূত্র:  দৈনিক ইত্তেফাক