‘এইমাত্র জানা গেল আমাদের শনির আখড়ায় ও সাইনবোর্ড এলাকায় ২৭জন মারা গেছে করোনাভাইরাসে। আপনারা সবাই সতর্ক হউন নিজে জানুন, অন্যকে জানাতে সাহায্য করুন, শেয়ার করে তথ্যটি সবার কাছে পৌঁছে দিন-আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন’।


এমন একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার (১ এপ্রিল) সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্যটি দেখার পরপরেই তদন্তে নামে সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ টিম। প্রযুক্তিগত সহায়তায় সেই পোস্টকারী মোঃ নাইমুর রহমান ওরফে নাইমকে (১৯) যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুধু নাইম নয় গত কয়েকদিনে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে সারাদেশে এমন ১৮ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।


প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীতেই মারাত্মক আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশেও এই আতঙ্ক কাজে লাগিয়ে একের পর এক গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। কখনো থানকুনি পাতা, কখনো রং চা, কালিজিরা, তেলাপিয়া মাছ খাওয়া, মাওলানার স্বপ্ন দেখা, কিংবা নতুন নতুন ভুয়া মৃত্যুর খবরে প্রতিদিনই সরব হয়ে উঠছে ইউটিউব, ফেসবুক ও অসংখ্য ভুয়া অনলাইন নিউজপোর্টাল। সাধারণ মানুষও এগুলো বিশ্বাস করছে অবলীলায়।


শুধু গুজবই নয়, লকডাউনকে কেন্দ্র করে পুলিশের পুরোনো বিভিন্ন ছবি এডিট করে মাস্ক লাগিয়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য মাধ্যমে।


এ ছাড়া করোনাভাইরাসের গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এমন তিন শতাধিক ফেসবুক আইডি নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ কাজে অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘অসত্য তথ্য বা গুজব’ ছড়ানোর বিরুদ্ধে সাইবার প্যাট্রলিং করছে পুলিশ-র‌্যাব।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা নিয়ে এমনিতেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে একটি চক্র। এরই অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে একটি পক্ষ করোনাভাইরাস নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করারও অপচেষ্টা চালাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর নিজস্ব পরিসংখ্যান দেওয়াসহ নানাভাবে গুজব সৃষ্টি করা হচ্ছে।


ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ সূত্র জানায়, মূলত দুভাবে করোনা নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে সফট পুশ, যেখানে মানুষকে বলে বুঝিয়ে কনটেন্ট মুছে ফেলা হচ্ছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করা হচ্ছে। ডিএমপি এবং পুলিশ সদর দফতরের পেজ থেকে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে হার্ড পুশ, যেখানে গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গুজব ছড়ানো অন্তত ১৫টি কনটেন্ট ইন্টারনেট থেকে অপসারণ করা হয়েছে।


জানতে চাইলে সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং সেলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রথমে যখন চীনে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা যায় তখন থেকেই আমরা বাংলাদেশে ইন্টারনেট মনিটরিং করছি। যারা অসত্য তথ্য বা গুজব প্রচার করছেন তাদের নিয়ে কাজ করছি। আমরা ইতোমধ্যে দেড়শ থেকে দুইশ আইডি মনিটরিংয়ে রেখেছি। এসব আইডি থেকে নিয়মিত গুজব ছড়ানো হচ্ছে।


পুলিশের পাশাপাশি একই ইস্যুতে কাজ করছে র‌্যাব। র‌্যাব সূত্র বলছে, এক মাস ধরে করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব সৃষ্টির বিরুদ্ধে সাইবার মাধ্যম মনিটরিং করছে র‌্যাবের সাইবার প্যাট্রলিং ইউনিট। এ ছাড়া গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।


জানতে চাইলে এ বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যেন কেউ গুজব সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে পারবে না। ইন্টারনেটে গুজব রোধে আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে।


সূত্রঃ বার্তা২৪.কম