একতাবদ্ধ থাকতে সকল শিক্ষা জ্ঞানদান করলেও করোনাভাইরাস আমাদের দুরে থাকতে বাধ্য করছে। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে ভীত সন্ত্রস্ত করলেও সবচেয়ে বেশী মানসিক আঘাত এসেছে সংক্রমণে মৃতদেহের যথাযথ মর্যাদা প্রদানে মানুষের নিরাপত্তা ভীতি।

ফেনীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মুসলমানের মৃত্যু হলে গোসল, জানাযা ও দাফনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ১০ জনের দুটি দল। সরকারের নির্দেশনামতে কাজ করতে নুসরাহ দাফন টিম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ফেনী জেলা যোগাযোগ করেছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে।

সদর ইউএনও নাসরীন সুলতানা জানান, কয়েককদিন আগে মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত চিঠির প্রেক্ষিতে করোনায় মৃতদেহের দাফনের জন্য দশজন আগ্রহী স্বেচ্ছাসেবী চেয়ে অফিশিয়াল ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছিলাম। তার ধারাবাহিকতায় দুটো দল আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।

নুসরাহ দাফন টিম এর প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উর্দু সাহিত্যে সদ্য পাশকৃত হাসান বিন মুমিন বলেন, মুসলমানের মৃতদেহ শরীয়ত সম্মতভাবে পালনীয়গুলো সম্পন্ন করতে করোনার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃতদেহের ভিডিও দেখে খুব খারাপ লাগলো। আক্রান্তদের যারা জীবিত তারাওতো জীবাণু ছড়াচ্ছে কিন্তু ডাক্তাররা বসে নেই, চিকিৎসা করছে। তাহলে আমরা কেন মৃতদেহে সম্মানটুকু দিতে পারবো না। আামাদের দলের আহ্বায়ক মোঃ হাবীবুল্লাহ প্রথম উদ্যোগ নেন। এরপর আমরা দশজন একত্রিত হই এবং ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি।

হাটহাজরী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ হাবীবুল্লাহ মুসাফীর বর্তমানে বাংলাদেশ সৌদি দুতাবাসে কর্মরত। তিনি বলেন, ইউএনওর পোস্ট দেখে আমি এ পরিকল্পনা করি। আজ বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে ইউএনও অফিসে আমাদের তালিকা দিই। মৃতদেহ ব্যবস্থাপনায় আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে এউএনও আমাদের জানিয়েছেন। মৃতদেহ জীবাণু ছড়ায় না, এ কথাটি আমরা মানুষকে বোঝাবো।

নুসরাহ দাফন টিমে আরও রয়েছেন, মাওলানা জাফর উল্লাহ, মাওঃ হাফেজ আবদুল্লাহ, হাফেজ কাউছার বাঙ্গালী, আবদুল কাদের মাসুম, মোঃ আবদুল জাব্বার, মাওলানা ইসমাইল, হাফেজ আতিকুল্লাহ ও মির হোসেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ফেনী জেলা দলের একজন আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন মানুষ যদি মারা যান তার দাফন কাফনের বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা রয়েছে। যদিও করোনা আক্রান্ত মৃত মানুষের দেহ নিয়ে চরম ভীতি রয়েছে তবু এ কাজ করতে কেউ না কেউ আসতেই হবে। আমরা এ দায়িত্ব নিতে চাই।

এ দলে আরও রয়েছেন, মাওলানা একরামুল হক ভুঁঞা, মাওলানা রফিকুল ইসলাম ভুঁঞা, আবদুল হাই সুমন, মাওলানা আবদুল আজিজ, মাওলানা আলাউদ্দিন সাভেরী, ক্বারি মুহা. আবুল খায়ের, ক্বারী সানাউল্লাহ আশেকী, মুহা. আবদুল করিম, মুহা. জাহিদ হাছান, মুহা. গোলাম কবির, মুহা. আবদুল আওয়াল, মুহা. মোহসিন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মৃতদেহ সৎকারে হিন্দুধর্মাবলম্বী ৫জন স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন হলেও ৩জনের একটি তালিকা আমাদের একজন অফিস সহকারি সংগ্রহ করেছে। এছাড়াও একজন হিন্দু নারী স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন রয়েছে।