করোনাভাইরাস সংক্রমিত জেলা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও নারায়নগঞ্জ হতে আসা ব্যক্তি ও পরিবারকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী গত দুইদিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বাইরের জেলা হতে ফেনীতে আসা ১২০টি বাড়ির সদস্যদের সার্বক্ষণিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ অনুযায়ী কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।


স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কিছু কিছু বাড়িতে লাল পতাকা লাগানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়ি চিহ্নিত করার পাশাপাশি সকলকে সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটি। এছাড়া ওইসব বাড়িতে যিনি অন্য জেলা হতে এসেছেন তাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট কক্ষে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি কোনভাবেই সেখান থেকে বের হতে পারবে না। উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক তা তদারকি করছে।


ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, গত দুইদিনে ফেনী সদরের ১৭টি পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কালিদহে ৩টি পরিবার, মোটবীতে ১টি, শর্শদীতে ৬টি পরিবার, লেমুয়াতে ১টি পরিবার, ফাজিলপুরে ২টি পরিবার, ফেনী শহরে ৩টি পরিবার, বিসিক রোডে ১টি পরিবারকে সার্বক্ষণিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পাশাপাশি কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

ইউএনও বলেন, এদের কারো মধ্যে কোন সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাবো। ফাজিলপুরের শ্বাসকষ্টে মৃত ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ছেলেকেও নজরদারিতে রেখেছি। তিনি বলেন, ওই বৃদ্ধের নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসায় এখন শুধু ওই পরিবারকেই লকডাউনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিন না যাওয়া পর্যন্ত তারা এভাবে থাকবে। ওই বাড়ি ছাড়া এর পাশের বাড়িগুলোতে তা শিথিল করা হয়েছে।


পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছমিন আক্তার বলেন, নারায়নগঞ্জ হতে যারা এসেছেন তারা পরিবারের সাথে মিশে গেছেন। সেজন্য আমরা উক্ত বাড়িকে শতভাগ কোয়ারেন্টিনের আওতায় এনেছি। তাদের বাড়িতে কেউ ঢুকবেও না বেরও হবে না। গত দুইদিনে মির্জানগরের ২০টি ও চিথলিয়ার ৯টি, বক্সমাহমুদ ১০টি ও পৌরসভার আরও বেশ কয়েকটি বাড়িতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদেরকে পরিবারসহ ঘরে থাকার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-নারায়নগঞ্জ হতে যারাই আসছে, তাদের প্রত্যেকেই শতভাগ কোয়ারেন্টিনে রাখছি আমরা। তিনি বলেন, ১৪ দিনের মধ্যে যদি তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করবো। জনসাধারণকে সতর্ক করতে চিহ্নিত বাড়িতে লাল পতাকা লাগানো হয়েছে।


দাগনভূঞা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুইদিনে দাগনভূঞার সিন্দুরপুরের ৮টি বাড়িসহ ১১ পরিবারকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।


ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে ফেনীতে এসেছেন এমন বেশ কিছু বাড়ি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের নয়টি বাড়িকে কোয়ারেন্টিনের আওতায় এনেছে উপজেলা প্রশাসন।


অন্যদিকে গতকাল ছাগলনাইয়ার ১৬টি বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এসব বাড়িতে উপজেলা প্রশাসন লাল পতাকা লাগিয়েছে।


জনগণকে আতংকিত না হয়ে জারিকৃত সরকারি নির্দেশনা মেনে নিজ নিজ ঘরে থাকার অনুরোধ করে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া তাহের বলেন, ওইসব বাড়িতে যিনি অন্য জেলা হতে এসেছেন তাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট কক্ষে থাকতে হবে। তিনি কোনভাবেই সেখান থেকে বের হতে পারবে না। উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক তা তদারকি করবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


ইউএনও বলেন, পরবর্তীতে যারা সংক্রমিত জেলা হতে উপজেলায় আসবেন, তাদের জন্যও এ আদেশ প্রযোজ্য হবে। এটি ওয়ার্ড কমিটি মনিটরিং করবেন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।


জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ২৫টি বাড়ির বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।