প্রচন্ড শীতের রাতে শুধু একটা হ্যাফ প্যান্ট পরে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন এক জামাই। এই অবস্থা দেখে শ্বশুর বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে গেলো। শ্বশুর আব্বা-ই প্রথম জিজ্ঞাস করলো ‘কি হইছে জামাই এমন অবস্থা কেন?’ ‘শীতে কাঁপতে কাঁপতে জামাই বলল’ আব্বা ডাকাত ধরেছিল। সাংঘাতিক ডাকাত। কাপড়চোপড়সহ সব ডাকাতি করে নিয়েছে’। শ্বশুর আব্বা মুখ কাচুমাচু করে বললো “তাই বলে তুমি এই হ্যাফ প্যান্ট পরে শ্বশুর বাড়িতে আসলা! তোমার লজ্জা করলো না? আমার বংশের তো একটা সম্মান আছে”। জামাই শীতে কাঁপতেই কাঁপতেই উত্তর দিল “আব্বা এই হ্যাফ প্যান্ট যে ওরা দয়া করে নেয়নি এটাই আপনার বংশের কপাল”। দেখো জামাই আমার বংশ নিয়ে কোনো কথা হবে না। তুমি ডাকাতদের বলো নাই তুমি কার জামাই?


আসা যাক মূল কথায় :

বৈশ্বিক সমস্যা করোনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে পৃথিবী। মানুষ ভুলতে বসেছে মানবতা। সম্প্রতি মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনা মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে। পরে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিযে এগিয়ে আসা ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন সুলতানার হস্তক্ষেপে লাশ দাফন করা হয়।


১৩ এপ্রিল, সোমবার ফেনীর এক বাসিন্দা ঢাকায় কিডনি সমস্যাজনিত রোগে ডায়ালাইসিস করা অবস্থায় কল্যাণপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। মৃত ব্যক্তির নাম হাজেরা বেগম (৬০)। মারা যাওয়া বৃদ্ধ নারীর ভাই কামাল উদ্দিন মোল্লার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে তিনি ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরীন সুলতানাকে বিষয়টি জানালে তিনি লাশ নিয়ে আসার পরামর্শ দেন এবং তিনি দাফনের সব ব্যবস্থা করতে রাজি হন।


ওই প্রেক্ষিতে ইউএনও নাসরীন সুলতানা ফেনী মডেল থানা পুলিশকে ও শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁঞাকে ফেনী অংশে ঢাকা থেকে আসা লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি প্রবেশ করতে যেন কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি না হয় তাদের ওই স্থানে অবস্থান করতে বলেন। তবে তারা যাওয়ার পূর্বেই অ্যাম্বুলেন্সটি পৌঁছে যায়।


শর্শদির আবুপুরে মৃতের স্বজনেরা রাত ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে গ্রামের কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে ভাঙচুর চালায়। পরে ফেনী মডেল থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাতে লাশটি দাফনের জন্য ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিনের সাথে কথা বলে পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর পৌর গোরস্থানে রাত ৩টার দিকে স্থানীয় কাউন্সিলর আতিক উল্যাহ ফয়সালের সহযোগিতায় মসজিদের এক মুয়াজ্জিন ডেকে এনে জানাযা পড়িয়ে পৌরসভার কয়েকজন কর্মচারী দিয়ে ওই লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।


কামাল উদ্দিন মোল্লা জানান, তাঁর বোন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। মৃত ওই নারীর ডেথ সার্টিফিকেটও তিনি দেখিয়েছেন কিন্তু এলাকার যারা তাঁদের জায়গা জমি দখল করে রেখেছে, তারা এই ষড়যন্ত্র করে বাধা সৃষ্টি করেছে।


করোনায় বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে সমাজ ও দেশে। এখন যেমন করোনার লক্ষণযুক্ত কারও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় মানুষজন বাধা দিচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তো বটেই, তার পরিবারের সদস্যদের সমাজ একঘরে করছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মোশতাক হোসেনের মতে, ঐতিহাসিকভাবেই মহামারির সময় মানুষের মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়। বিষন্নতা ও উদ্বিগ্নতা ছাড়াও তখন অমানবিক ও অযৌক্তিক আচরণ বেড়ে যায়। মানসিক সমস্যা থেকেই মানুষ এমন করে। তিনি জোর দিচ্ছেন পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা বাড়ানোর ওপর।

 

লেখকঃ

সহ-সম্পাদক

দৈনিক অজেয় বাংলা